সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ধর্ষণ ও পাচারের পৃথক দু’টি মামলায় ৩ ব্যক্তির সাজা

By daily satkhira

May 22, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক : অপহরণের পর ধর্ষণ ও পাচারের পৃথক দু’টি মামলায় দু’ ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক ব্যক্তির ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার এক জনাকীর্ণ আদালতে এসব রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আফছার আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম বাবু (৩৩), যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার উত্তর এনায়েতপুর গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে বেল্লাল সরদার (৪০) ও কলারোয়া উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের রুস্তুম আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল সরদার (৪৮)। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের খালেক ঢালী ও শাজাহান আলী চাকুরি দেওয়ার নামে প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচারের জন্য কলারোয়া উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সিরাজুল সরদারের বাড়িতে তিন মহিলা ও তিনজন পুরুষকে রাখা হয়। পরদিন ওই বাড়ি থেকে পুলিশ যশোর জেলার কোতোয়ালি উপজেলার গলদা গ্রামের মিনু ওরফে রিনা (২০), একই জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ন’পাড়া গ্রামের নাজমা ওরফে দীপা (২২) একই জেলার মনিরামপুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের নার্গিস পারভিন ওরফে পারভিন (১৮)সহ তিনজন পুরুষকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কলারোয়া থানার সহকারি উপপরিদর্শক আনিসুর রহমান বাদি হয়ে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার উত্তর এনায়েতপুর গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে বেল্লাল সরদার(৪০), একই গ্রামের জয়নাল সরদারের ছেলে নজরুল সরদার(৪০) ও কলারোয়া উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের রুস্তুম আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল সরদার (৪৮) এর নাম উল্লেখ করে ২০০৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলারোয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৫(১)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৬ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি এজাহারভুক্ত তিন আসামীসহ মনিরামপুরের এনায়েতপুর গ্রামের খালেক ঢালীর নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগত্র দাখিল করেন। আটজনের সাক্ষীর জবানবন্দি ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে অভিযোগ নারী পাচার ও পাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিল্লাল সরদারকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাচারে সহযোগিতা করায় আসামী সিরাজুল সরদারকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক রয়েছে। অপরদিকে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের একটি গ্রামের ও নুনগোলা দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাড়ির পাশে কেনা আম বাগান পাহারা দিতো একই উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আফছার আলী ও তার ছেলে আমিনুল ইসলাম বাবু। আম খাওানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাবু ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো। ২০০৭ সালের ৩ মে সকাল ৬টার দিকে ওই মাদ্রাসা ছাত্রী কোরআন শরিফ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় ওই মাদ্রাসার সামনে থেকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় বাবু। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে বাবুর নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ১৭ মে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যদিও অপহরণের পর ওই ছাত্রীকে আটক রেখে ধর্ষণ করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক খালিদ হাসান মুন্সি ওই বছরের ৩০ জুলাই বাদি এজাহারভুক্ত আসামীসহ একই গ্রামের আব্দুস সবুর, আজিজুল ও সাহেব আলীর নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯(১)/৩০ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৩জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী আমিনুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ সন্দোহতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামী আমিনুল ইসলাম বাবুকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় অপহরণের অভিযোগে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারামণ্ড দেন। একইসাথে ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগে তার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দু’টি সাজা একইাসাথে চলবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। আসামী আমিনুল ইসলাম বাবু পলাতক রয়েছে। উভয় মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. নাদিরা পারভিন।