তালা

তালায় চরমপন্থী নেতা আপত্তিকর অবস্থায় আটক; ৬০ হাজার টাকায় মুক্ত!

By Daily Satkhira

November 21, 2016

নিজস্ব প্রতিবেদক: তালার একসময়ের ত্রাস নিহত আজিজ বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার আক্কাজ আলী সরদারকে এক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করার পর থানা থেকে ছেড়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেসমতঘোনা গ্রামের একটি মৎস্য ঘের থেকে তাকে নারীসহ আটক করার পর ওই রাতেই স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াছিন সরদারের মধ্যস্থতায় ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাডার আক্কাজ সরদারকে আটক করার পর থানা পুলিশ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, দাউনিপাড়া গ্রামের মৃত মোহর আলী সরদারের পুত্র আক্কাজ আলী শেখ নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও আজিজ বাহিনীর সক্রিয় ক্যাডার হবার পর থেকে তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বিগত ২০০০ সালের দিকে থানার মধ্যে আজিজ এর রহস্যজনক মৃত্যু হলে আক্কাজের অত্যাচার কিছুটা কমে আসে। আজিজের নামে বিভিন্ন সময় ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন অপরাধের ৮/১০টি মামলা দায়ের হয়। এক এগারো সরকারের সময় সে পালিয়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময় এলাকায় ফিরে আসে এবং বড় ভাই আওয়ামীলীগ নেতা আলতাফ হোসেনের সহযোগিতায় মামলাগুলো থেকে রহস্যজনকভাবে অব্যাহতি পাওয়া শুরু করে। এলাকাবাসী আরো জানান, এলাকায় ফিরে এসে আক্কাজ আলী পাশ্ববর্তী কেসমতঘোনা গ্রামের অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের এক গৃহবধুর সাথে পরকীয়া শুরু করে। প্রেমের জেরে ওই মহিলা আক্কাজ সরদারের সহযোগিতায় তার স্বামীকে তালাক দিয়ে এলাকা ছাড়া করে দিয়ে প্রতিনিয়ত যেখানে সেখানে প্রকাশ্যে অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু করে। গত শুক্রবার রাতে আক্কাজ সরদার ওই মহিলাকে নিয়ে এলাকার আতিয়ার ডাক্তারের মৎস্য ঘেরের একটি বাসার মধ্যে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তালা থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানার এসআই আহাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আক্কাজ আলী সরদারসহ ওই গৃহবধুকে হাতেনাতে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। ঘটনাটি তৎক্ষণাত প্রচার হয়ে গেলে সেখানে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ জড়ো হয়। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, চরমপন্থী আক্কাজ আলী সরদারকে আটক করার পরপরই সঙ্গীয় কনস্টেবল সাইফুল তার মোবাইল ফোনে উভয়ের নগ্ন ছবি ধারণ করে। পরবর্তীতে ধৃতদের ছেড়ে দেবার জন্য পুলিশ আক্কাজ সরদারসহ তার ভাই আলতাফ হোসেন এর নিকট ১ লক্ষ টাকা দাবি করে। এসময় আলতাফ হোসেন বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা এনে এসআই আহাদ এর কাছে দেয়। কিন্তু আরো টাকার দাবীতে পুলিশ ওই রাতেই আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসলে শুক্রবার ভোর রাতে তালা সদর ইউনিয়নের বিতর্কীত ইউপি সদস্য ইয়াছিন সরদারের মধ্যস্থতায় থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই সূত্রটি আরো জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে থানা থেকে চরমপন্থী আক্কাজ আলী সরদার সহ ওই গৃহবধুকে জিম্মাই নেয়ার পর শনিবার দুপুরে ইয়াছিন মেম্বর পুলিশকে চুক্তি মাফিক বাকি ৪০ হাজার টাকা প্রদান করে। একজন চরমপন্থী ক্যাডারকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতে নাতে আটক করে থানা থেকে ছেড়ে দেবার ঘটনায় গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। যে কারনে ওই ঘটনার বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গ্রামবাসী সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এঘটনায় তালার থানার ওসি মো. ছগির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আজকের সাতক্ষীরাকে বলেন, “এধরনের কোন ঘটনা আমার জানা নেই। ইয়াবাসহ হাফিজ নামে একজন আটক আছে।” এদিকে এসআই আহাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আসলে এটি আটক না। ওই দিন রাতে আমরা ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। আসার সময় আক্কাস ও এক মহিলাকে গল্প করতে দেখে তাদের কাছে যাই। তখন তারা বলেন আমরা ঘের পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু আমরা তাদের বিশ্বাস করতে না পেরে স্থানীয় ইউপি মেম্বর ইয়াছিন আলীকে সংবাদ দেই। তিনি আসার পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে নারীসহ আপত্তিকর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আক্কাস মুসলিম আর ওই নারী ভিন্ন ধর্মের। শুধু তাই নয় ওই নারী আক্কাসের থেকে বয়সে অনেক বড়। সে কারণে এটি সঠিক নই। স্থানীয় গ্রুপিং এর কারণে এধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।” অপরদিকে আক্কাজ আলীর ভাই আলতাফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “ওইদিন রাত ২টার দিকে আমার ভাই আমাকে ফোন করে বলে, পুলিশ আমাকে মারপিট করছে তোমরা আস। আমি গিয়ে দেখি তার সাথে ওই মহিলা রয়েছে। তখন পুলিশের এস আই আহাদ বলেন, তারা অসামাজিক কাজ করছিল এখনই ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অনেক দর কষাকষির পর ২০ হাজার টাকা নিতে রাজি হন তিনি। কিন্তু আমার ছোট ভাই ২০ হাজার টাকা নিয়ে তার হাতে দিলে তিনি আক্কাস এবং ওই নারীকে নিয়ে থানায় যান। পরবর্তীতে আরো ৪০ হাজার টাকা দিলে তিনি তাদের ছেড়ে দেন।” আলতাফ হোসেন আরো বলেন, প্রথমত আমার ভাইকে আমি অপরাধী মনে করেছিলাম। পরবর্তীতে জানলাম ওই মহিলার উপর প্রভাব খাটিয়ে এটি করানো হয়েছে এবং জোরপূবর্ক সাইফুল নামের এক কনস্টবেলকে দিয়ে তাদের আপত্তিকর ছবিও তুলেছেন এস আই আহাদ। আমার প্রশ্ন হলÑ ভাই অপরাধী হলে সাজা পাবে। কিন্তু টাকার বিনিময়ে তার অপরাধ মাফ হল কেন? অন্যদিকে ওই মহিলার সাবেক স্বামী পিরতোষ দাশ আজকের সাতক্ষীরাকে বলেন, “তার চরিত্রের অবক্ষয়ের কারণে আমি তাকে বকাবকি করি। যে কারণে সে আমাকে তালাক দেয়। তারপর আর আমি কিছুই জানিনা।”