আন্তর্জাতিক

ব্রিটেনে জোর করে বিয়ে, তালিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি

By Daily Satkhira

May 24, 2018

ব্রিটেনে বাঙ্গালি পরিবারগুলোতে ফোর্স ম্যারিজের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ২০১৭ সালে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ১২৯টি ফোর্সড ম্যারিজের ঘটনা ঘটেছে। ফোর্সড ম্যারিজ ঘটনার তালিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটি ২য় অবস্থানে রয়েছে।

মূলত পরিবার বা অন্যকোন পক্ষের ইচ্ছায় জোর করে কাউকে বিয়ে দেয়ার ঘটনাকে ফোর্সড ম্যারিজ বা জোড় পূর্বক বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হয়। যুক্তরাজ্যে ইমিগ্রেন্ট পরিবারগুলোতে এ ধরনের বিয়ের ঘটনা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জোড়পূর্বক বিয়ের ঘটনাগুলো ঘটে যুক্তরাজ্যের বাইরে। অনেক বাংলাদেশি অভিভাবক ধর্মীয় বা সংস্কৃতিগত কারনে বাংলাদেশে নিয়ে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট পাত্র বা পাত্রীর পছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। যুক্তরাজ্য জোড় করে বিয়ে দেওয়াকে ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফরেন অফিস ও হোম অফিস যৌথভাবে গঠন করা একটি ফোর্সড ম্যারিজ ইউনিটের মাধ্যমে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রোধে সহায়তা দেয়। সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফোর্সড ম্যারিজ ইউনিট ২০১৭ সালে ১১শ ৯৬টি সম্ভাব্য ফোর্সড ম্যারিজের ঘটনা মোকাবেলা করেছে। এরমধ্যে চার ভাগের ১ ভাগ ঘটনার শিকার ১৮ বছরের কম বয়সী। কেবল মেয়েরা যে এই ঘটনার শিকার হচ্ছেন তা কিন্তু নয়। প্রতি ৫টি ঘটনার একটির শিকার হচ্ছেন ছেলেরা। তবে সামগ্রিকভাবে ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালের ফোর্সড ম্যারিজের সংখ্যা ১৯ শতাংশ কম হলে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ফোর্সড ম্যারিজের সংখ্যা ১২১টি ছিলো কিন্তু ২০১৭ সালে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৯টিতে! পরিসংখ্যান অনুযায়ী জোড় পূর্বক বিয়ের ৪৩৯টি ঘটনা নিয়ে শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি কমিউনিটি, ১২৯টি ঘটনা নিয়ে ২য় অবস্থানে বাংলাদেশি কমিউনিটি। ৯১টি ঘটনা নিয়ে এই তালিকার ৩য় স্থানে রয়েছে সোমালিয়া এবং ৮২টি ঘটনা নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ভারত!

এদিকে ফোর্সড ম্যারিজের এই পরিসংখ্যান যখন বের হয় তখন লিডসের আদালতে কাঠগড়ায় ফোর্সড ম্যারিজের অভিযোগ নিয়ে বিচারের মুখোমুখি এক বাংলাদেশি বাবা-মা। তাদের ১৯ বছরের মেয়ে অভিযোগ করে তাকে জোড় করে বাংলাদেশে নিয়ে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন তাদের বাবা মা। আইনি কারনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেয়েটি জানায়, তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তার বাবা-মা। এমনকি ওই ছেলেটির একটি সন্তানও রয়েছে।

মেয়েটির রেকর্ডকৃত বক্তব্য লিডস ক্রাউন কোর্টে বিচারকদের শুনানো হয়। এতে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনের কথা বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশে যাওয়ার পরদিনই ৩ জুলাই বাবা জানায়, তাকে দেশে চাচাতো ভাইকে বিয়ে করতে হবে। পাত্র হিসাবে সে খুবই যোগ্য। সে যদি ঐ ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে সে রানীর মতো জীবন যাপন করবে আর বিয়ে না করলে পুরো পরিবারের জন্য বিষয়টি কলঙ্কের হবে। বিয়ের এই অব্যাহত চাপে সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলো।

মেয়েটি তার বক্তব্যে আরো জানায়, তারা বাবা তাকে বলেন তোমাকে ১৮ বছর লালন পালন করেছি, এখন যদি কথা না শুনো তাহলে ১৮ সেকেন্ডও লাগবে না তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করতে। একপর্যায়ে মৌখিক নির্যাতন শারিরীক নির্যাতনেও রূপ নেয়। একদিন মেয়েটির বাবা তার মাথায় আঘাত করেন। মেয়েটি ভয়ে ঘুম ও খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। অবশেষে ব্রিটেনে থাকা বোন ও বন্ধুর সহযোগিতায় বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশনের হস্তক্ষেপে বিয়ের আগের দিন মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।

নির্যাতিতা মেয়েটি তার বক্তব্যে বলে, সে চায় তার বাবার উপযুক্ত শাস্তি হোক। সে কখনোই তার বাবার সাথে কথা বলতে চায় না।

মেয়েটির বাবা মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে মেয়েকে জোড় পূর্বক বিয়ে দিতে চেয়ে সহিংস আচরণ ও শারিরীক নির্যাতন এবং হুমকি প্রদান। এখনও এই মামলার শুনানি চলছে।

উল্লেখ্য, গত দশকে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ফোর্সড ম্যারিজের সংখ্যা মারাত্নক আকার ধারণ করলে বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশন, ব্রিটিশ হোম অফিস, ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয় ও নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে এর সংখ্যা কমিয়ে আনে। তবে সম্প্রতি আবারো ফোর্সড ম্যারিজের সংখ্যা বাড়ছে।