ন্যাশনাল ডেস্ক: মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হতে পারেন সাড়ে ৪শ’ জনপ্রতিনিধি। এই তালিকায় আছে ১০ জন এমপি, ১৫ জন সাবেক এমপি, অর্ধশতাধিক পৌর মেয়র, দুই শতাধিক কাউন্সিলর এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম।
তালিকাটি ইতিমধ্যে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ঈদের পরই এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে (রমজান মাসজুড়ে) প্রাথমিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের ৩ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সময় পাবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর মাদকের এক হাজার গডফাদার এবং তালিকাভুক্ত আড়াই হাজার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই এক হাজার গডফাদারের মধ্যে সাড়ে ৪শ’ জনপ্রতিনিধি আছেন।
পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গত ১০ দিনে ৫৫ জন নিহত হয়েছে।
এছাড়া ১ রমজান থেকে বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ী। মামলা হয়েছে প্রায় চার হাজার জনের বিরুদ্ধে। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৭২১ জনের।
সূত্র আরও জানায়, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাতে ১৩ মে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার এবং এসপিদের কাছে পুলিশ সদর দফতর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ, জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকাও পাঠানো হয়।
সম্প্রতি র্যাবের পক্ষ থেকে সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্যান্য ইউনিটের পক্ষ থেকেও একই ধরনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে।
সবগুলো তালিকার সমন্বয়ে এরই মধ্যে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। ওই তালিকাটি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে পাঠানো হয় র্যাব-পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে। এরপরই মাঠে নামে র্যাব এবং পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র্যাবের দাবি- নিহতরা সবাই শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে এসব ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।
নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, গ্রেফতারের পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। বিএনপির দাবি- এর পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার নিজ দফতরে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, কাউকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে না। মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ অভিযানে রয়েছে। অভিযান চলাকালে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাব-পুলিশের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আর র্যাব-পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ছে।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী বা তাদের গডফাদাররা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ ছাড় পাবে না।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, সারা দেশে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সারা দেশে মাদকের গডফাদার, শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা করেছি। সেই তালিকা অনুযায়ী অভিযান চলছে। এক্ষেত্রে গডফাদার এবং শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীদের দিকে পুলিশের নজর থাকবে বেশি। তালিকায় যেসব পুলিশ সদস্য বা জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে তাদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
র্যাব সদর দফতরের উপপরিচালক মেজর আবদুল্লাহ আল মেহেদী বুধবার জানান, বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে র্যাব এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭২১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। আর বিশেষ অভিযান চলাকালে বন্দুকযুদ্ধে ৯ দিনে ৪৭ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, ১২ ফেব্র“য়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকাতে গঠিত এনফোর্সমেন্ট কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার আলোকে পুলিশের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের ১ হাজার ১৫১ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রস্তুত করা এক তালিকা অনুযায়ী রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৩৮ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের পৃষ্ঠপোষক রয়েছে। এই পাঁচ জেলার পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে দু’জন বর্তমান এমপি ও দু’জন সাবেক এমপির নাম রয়েছে। এসব জেলায় আছে দেড় শতাধিক মাদকের হাট বা স্পট।
গত বছরের ২ থেকে ৭ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের ৪৫তম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিবির পক্ষ থেকে দেশের ২৫টি জেলার ৩৩৭ জন শীর্ষ মাদক পাচারকারীর তালিকা তৈরি করা হয়। ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন রোধে গঠিত কোর কমিটির বিশেষ সভা গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের ৭০৬ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এসব তালিকার মধ্যে একাধিক তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে সরকার।
সূত্র: যুগান্তর, ২৪ মে ২০১৮।