ন্যাশনাল ডেস্ক: মাদক বিক্রেতা, ডিলারসহ মাদকের গডফাদারদের অর্থ-বিত্তের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে খতিয়ে দেখা হবে তাদের নামে-বেনামে গড়া সম্পদ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের করা মাদক ব্যবসায়ীদের ১৪১ জনের একটি তালিকা জানুয়ারিতে দুদকে পাঠানো হলেও এতদিন তা হিমাগারে ছিল। তালিকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে দুদকও নড়েচড়ে বসেছে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদারদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে জোরেশোরে অনুসন্ধান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দুদকের দু’জন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি উচ্চপর্যায়ের টিমকে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুদক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে পাওয়া তালিকার বাইরে আরও কোনো তালিকা থাকলে তা দুদককে সরবরাহ করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের কাছে চিঠি দেবে। রাজধানীর শীর্ষ ৮২ মাদক ব্যবসায়ীর যে তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে দুদক সেই তালিকাটিও সংগ্রহ করে জড়িতদের সম্পদের তদন্ত করবে। সংস্থাটি নিজস্ব গোয়েন্দাদের দিয়েও গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সহায়তা করে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর সত্যতা নিরূপণ করতে তাদের বিষয়েও তথ্য জোগাড় করবে দুদক। এদিকে সরকারদলীয় একাধিক এমপির বিরদ্ধে মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া ও মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন বলেন, মাদক ব্যবসা করে যারা অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, যাদের কারণে সমাজে সাধারণ মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তফসিল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে দুদকের কাছে আসা মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনুসন্ধান চলছে খুলনা-২ আসনের সরকারদলীয় এমপি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। দুদকের কাছে থাকা তথ্য বলছে, এমপি মিজানুর রহমান মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনে ১৬ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে পাওয়া তালিকার ১৪১ জনের মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির নামও রয়েছে। তালিকায় আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। তালিকার একটি প্যারায় বলা হয়েছে, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’ দুদকের তালিকায় বদি ছাড়াও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম উঠে এসেছে।