নিজস্ব প্রতিনিধি: সদর এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র সাতক্ষীরায় না থাকা এবং তার সময়ের অভাবে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীদের টাকা মে মাসের ২৬ তারিখেও বিতরণ করা হয়নি। গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ থেকে উক্ত তিন মাসের টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে। জেলার অন্যান্য স্থানে কার্ডধারীদের নিজ ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা বিতরণ করা হলেও সদর উপজেলায় ভাতার টাকা নগদে হাতে হাতে বিতরণ করা হয় বলে জানা গেছে। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মেহরুন (ছদ্মনাম)। স্বামীকে হারানোর কয়েক বছর পর অনেক কষ্টে একটি বিধবা ভাতা কার্ড পেয়েছেন। পৌরসভা ও উপজেলা সমাজসেবা অধিপ্তরের আওতায় কার্ডধারীদের তিন মাস পরপর তাদের ১৫শ’ টাকা করে প্রদান করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাসের টাকা মে মাসের শেষেও তারা পাননি। টাকা নিতে পৌরসভায় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসে একাধিকবার ধর্না দিলেও কোন লাভ হয়নি। সেখানে গেলে বলা হচ্ছে এমপি সাহেব এখন ঢাকায় আছেন। তিনি সাতক্ষীরায় আসলে কার্ড প্রদান করা হবে। কখনও আবার বলা হচ্ছে এমপি সাহেবের এখন সময় কম, সেজন্য টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। তিনি সময় দিলে আপনাদের টাকা দেওয়ার তারিখ জানানো হবে। সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সমাসেবা অফিসের আওতায় ১৯৮৮ জন বয়স্ক ভাতাভোগীর তিন মাসের ১৫শ’ টাকা হারে ২৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। বিধবা ভাতা কার্ডের আওতায় ২৯১ জনের ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিবন্ধী কার্ডে ৬০১ জনেক ১২ লাখ ৬২ হাজার ১শ’ টাকা গত মার্চ মাসে বিতরণ করার কথা থাকলেও সেটি বিতরণ করা হয়নি। পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ভাতা ভোগীদের ২৭ মে ও ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ডের ভাতা ভোগীদের ২৮ মে পিটিআই স্কুলে এবং ৭, ৮ এবং ৯ ওয়ার্ডের ভাতা ভোগীদের নবজীবন স্কুলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সদর উপজেলার ৮২৯ জন বয়স্ক ভাতাভোগীর তিন মাসের ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। বিধবা ভাতার সুবিধাভোগীর তিন মাসের ৩৩৮ জনের ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা এবং ১৭৬ প্রতিবন্ধীর তিন মাসের ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা আটকে আছে। এই টাকা সুবিধাভোগীদের নিজ এ্যাকাউন্টে দেওয়ার কথা থাকেলও এমপি রবির সময়ের অভাবে সেগুলো বিতরণ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভা ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, সদর উপজেলায় গত মাসের ১৮ তারিখে বরাদ্দ আসলেও এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাতক্ষীরায় না থাকার কারণে কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি। সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, সুবিধাভোগীদের অধিকাংশ কম শিক্ষিত। সে কারণে অনেক সময় দেরি হয়। তালিকা প্রস্তুত করতে দেরি হওয়ার কারণেও টাকা দিতে দেরি হয়। টাকা কবে বিতরণ হবে সেটা আমরা জানতে পারি না। সমাজসেবা অফিসের অপর একজন কমকর্তা বলেন, পৌর এলাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতার টাকা মেয়র ও কাউন্সিলদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। এপ্রিলের ৫ তারিখে বরাদ্দ হলেও ব্যাংকে টাকা আসে ১৮ তারিখে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্যস্ততার কারণে টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া সদর এমপি সাহেব বলেছেন, এবার কার্ড বিতরণের সময় তিনি উপস্থিত থাকবেন। তিনি ঢাকা ছিলেন এবং সময় দিতে পারছেন না বলে কার্ড বিতরণে দেরি হয়েছে। অনেক কার্ডধারী ব্যক্তি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলেননি। সে কারণে অনেক সময় হাতে হাতে টাকা বিতরণ করা হয়। উক্ত দুই কর্মকর্তা রাতে টেলিফোন করে তাদের নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মন্তব্য জানতে শুক্রবার সন্ধ্যায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফোন দিলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।