জাতীয়

দেশের সব নাগরিক পাবেন সমান পেনশন

By Daily Satkhira

May 31, 2018

ন্যাশনাল ডেস্ক: গত ২১ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরীকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন পেনশনের রূপরেখা এবার ঘোষণা করব। তার বাস্তবায়ন হয়তো সামান্য শুরু হবে। সর্বজনীন পেনশনে পেনশন সবার জন্য সমান হবে। সর্বজনীন পেনশনে সব পেনশনার পেনশনের জন্য কন্ট্রিবিউট করবেন; শুধু যারা গরিব তারা ছাড়া সবাই। এক্ষেত্রে গরিবের সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে খাদ্যে নিম্নতম কেলোরিসীমা ঠিক করে।’

এরপর অর্থমন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এ বিষয়ে কাজ কতদূর এগিয়েছে এবং আমরা কি ঘোষণা দিতে পারব?’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় গেলে চালু করা হবে বেসরকারি কর্মজীবীদের জন্য পেনশন। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজও করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দেশে গিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছিল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকও। কথা ছিল গত অর্থবছর (২০১৭-১৮) থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্প ভিত্তিতে সর্বজনীন পেনশন চালুর। প্রস্তুতির অভাবে সেটি হয়নি। বলা হয়েছিল পরের বাজেটের কথা। সেই বাজেটও আসন্ন। আর এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন নিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রী প্রশ্ন করছেন অর্থ সচিবকে। বিষয়টি জানতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আসছে বাজেট থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর যে কথা ছিল, যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তবে নতুন বাজেটে সর্বজনীন পেনশনের ধরনটি কী হবে, কারা পাবেন, কারা বাস্তবায়ন করবে, সে বিষয়ে একটি রূপরেখা থাকতে পারে বলে জানান সচিব।

মুসলিম চৌধুরী জানান, সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরি না হওয়া। তিনি বলেন, বেসরকারি কর্মজীবীদের পেনশনের টাকা তো সরকার দেবে না। পেনশনার দেবেন, মালিকপক্ষ দেবেন। সেই অর্থ বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ হবে। তার মুনাফা যোগ করে একটি অঙ্ক পেনশন হিসেবে দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের সেই বন্ড মার্কেটই তো তৈরি হয়নি, যেখানে আমরা পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারি। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন চালুর আগে সেই পেনশন দেওয়ার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। তহবিল গঠন করতে হবে। এসব প্রস্তুতির অভাবেই এবার বাজেটে সর্বজনীন পেনশন চালুর ঘোষণাটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান অর্থসচিব।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল— বেসরকারি খাতে পেনশন দেওয়া। সরকারের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ২০১৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে বেসরকারি খাতের জন্য পেনশন স্কিম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প ব্যাংকিং বিভাগ হাতে নেয়। এ লক্ষ্যে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী সেটি অনুমোদনও দেন। কথা ছিল, সংস্থাটির টাকায় ‘প্রাইভেট পেনশন রেকর্ড কোম্পানি’ ও ‘প্রাইভেট পেনশন ট্রাস্ট’ গঠন করে বেসরকারি খাতকে পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে।

তবে প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে যখন ডিপিপি চাওয়া হয়, তখনই আপত্তি করে বসে অর্থ বিভাগ। তারা জানায়, যেহেতু সরকারি পেনশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগ, তাই এটি তাদের (অর্থ বিভাগ) মাধ্যমেই হওয়া উচিত। এরপর থেকে অর্থ বিভাগই দেখছে সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নের বিষয়টি।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমদিকে বিষয়টি শুধু বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের পেনশন দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল; তবে এখন এটি বৃহত্তর পরিসরে সব নাগরিকের জন্য পেনশন স্কিম চালুর সিদ্ধান্তে রূপ নিয়েছে। ফলে এটি বাস্তবায়ন করতে আরও সময় লাগবে। সর্বজনীন পেনশন চালুর জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হবে-সেটিই এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নেওয়া হচ্ছে।