খেলার খবর: সবশেষ বিশ্বকাপে জার্মানি প্রথম গোল হজম করেছিল ১৯৯৮ সালে। ওইবারও প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। কিন্তু ২-১ গোলের ঘুরে দাঁড়ানো জয় পেয়েছিল জার্মানরা। এবার হলো না অতীতের পুনরাবৃত্তি। মেক্সিকোর চমৎকার সব কাউন্টার অ্যাটাকে তটস্থ হয়ে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রবিবার ‘এফ’ গ্রুপের লড়াইয়ে দারুণ শুরু হলো মেক্সিকোর। পঞ্চমবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়ে জার্মানির বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল তারা। অন্যদিকে এই ম্যাচ হেরে কঠিন গ্রুপের পথচলা আরও জটিল হয়ে গেল জার্মানদের। পরের দুই ম্যাচে সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হবে তাদের। নয়তো ইতালি ও স্পেনের মতো লজ্জায় পড়তে হবে তাদের। চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলতে নেমে ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপেই বিদায় নিয়েছিল ইতালি ও স্পেন। প্রথম ম্যাচ হেরে এবার সেই শঙ্কায় থাকছে ইওয়াখিম ল্যোভের দল।
শুরু থেকেই দারুণ খেলেছে মেক্সিকো। ২ মিনিটে ইরভিং লোসানো বাম দিক দিয়ে দ্রুত গতিতে ডিবক্সে ঢুকে যান। জেরোম বোয়াটেং প্রতিহত করেন তার চেষ্টা। তৃতীয় মিনিটে ইয়াশুয়া কিমিখের থ্রো থেকে টিমো বেয়ারনার বল নিয়ে জার্মান বক্সে পৌঁছে শট নিয়েছিলেন, কিন্তু গোলপোস্টের একটু দূর দিয়ে বল চলে যায়।
১০ মিনিটে মানুয়েল নয়ারের কঠিন পরীক্ষা নেয় মেক্সিকো। জার্মানির দুর্বল মাঝমাঠের সুযোগ নিয়ে এক্তর এরেরা দূর থেকে শট নিয়েছিলেন। কোনোভাবে বলটা হাতের মধ্যে নিয়ে নেন জার্মান গোলরক্ষক।
টোনি ক্রসের হ্যান্ডবলে ফ্রি কিক পায় মেক্সিকো ১৪ মিনিটে। ডিবক্সের মাঝে থেকে হেক্তর মোরেনো হেড করেছিলেন। কিন্তু নয়ারকে খুব বেশি ভুগতে হয়নি তাকে রুখে দিতে।
১৫ মিনিটে সুযোগ পায় জার্মানি, কিমিখ ডানদিক থেকে পোস্টের দিকে বল বাড়ান। খেদিরা বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হন। সালসেদো দ্রুত বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে বিপদমুক্ত করেন।
২০ মিনিটে বেয়ারনারের দুর্বল শট জড়ায়নি জালে। দুই মিনিট পর গিয়েরমো ওচোয়া দূর থেকে নেওয়া ক্রোসের লম্বা শট ঠেকান।
মুহুর্মুহু আক্রমণে তটস্থ হয়ে পড়ে জার্মান রক্ষণভাগ। কিন্তু পারেনি তারা সেটা রক্ষা করতে। ৩৫ মিনিটে হাভিয়ের এর্নান্দেস বাঁ দিকে বল ঠেলে দেন, লোসানো কাট করে ঢুকে যান বক্সে এবং লক্ষ্যভেদ করেন শক্তিশালী শটে।
চার মিনিট পর আবারও ওচোয়া মেক্সিকোর ত্রাতা হন। ৩৯ মিনিটে ক্রোসের চমৎকার ফ্রি কিক আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় পথভ্রষ্ট করেন এই গোলরক্ষক।
প্রথম ৪৫ মিনিটে সব মিলিয়ে শট হয়েছে ৯টি। ২০০৬ সালে টোগো ও ফ্রান্সের ম্যাচের পর সবচেয়ে বেশি।
প্রথমার্ধ মেক্সিকো শেষ করে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে। বিরতির পর গোলের জন্যে হন্যে হয়ে থেকেছে জার্মানি। কিন্তু বল কখনও রুখে দিয়েছেন মেক্সিকান ডিফেন্ডাররা, আবার কখনও গোলপোস্টের উপর দিয়ে গেছে মাঠের বাইরে।
তবে বিরতির পর প্রথম সুযোগ তৈরি করেছিল মেক্সিকো। এর্নান্দেস লক্ষ্যে শট নিতে ব্যর্থ হলে বল পাঠান ভেলার কাছে। কিন্তু বল নিজের পায়ে রাখতে পারেননি তিনি।
৬৫ মিনিটে বোয়াটেংয়ের ক্রস থেকে কিমিখ চমৎকার অ্যাক্রোবেটিক ওভারহেড কিক নেন। সেটা জালে জড়ায়নি। ওচোয়ার মাথার ওপর দিয়ে বল পড়ে জালের উপরে। দুই মিনিট পর ড্রাক্সলারে শট মেক্সিকোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে এলে বেয়ারনারের ভলি গোলবারের উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৭০ মিনিটে এর্নান্দেস বল নিয়ে বক্সে ঢুকলে ম্যাট হামেলসের চ্যালেঞ্জে পড়ে যান। মেক্সিকোর পেনাল্টির জোর আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি।
এই ম্যাচে ৭৪ মিনিটে আন্দ্রেস গার্দাদোর বদলি নেমে ইতিহাস গড়েন রাফায়েল মারকেস। স্বদেশী আন্তোনিও কারবাজাল ও জার্মান লিজেন্ড লোথার ম্যাথাউসের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলার কীর্তি গড়লেন মেক্সিকোর অধিনায়ক।
অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারকে মাঠে পাওয়ার পর মেক্সিকো দুইবার সুযোগ নষ্ট করে। মিগুয়েল লাউনের দূরপাল্লার দুটি শট ৭৮ ও ৮২ মিনিটে গোলবারের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়।
৮৪ মিনিটে ক্রোসের লম্বা শট সহজে ঠেকান ওচোয়া। ইউলিয়ান ব্রান্ট ৮৯ মিনিটে জার্মানিকে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বায়ার লেভারকুসেন মিডফিল্ডারের জোরালো শট গোলপোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়।
আগামী ২৩ জুন সোচিতে জার্মানি দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে সুইডেনের বিপক্ষে। একই দিন রোস্তভে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে শীর্ষে থাকা মেক্সিকো।