খেলা

শুধু গোল করেন না রোনাল্ডো একজন দানবীরও

By Daily Satkhira

June 23, 2018

খেলার খবর: রূপকথার মতো ক্যারিয়ার সাজানো ফুটবল তারকা পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। জাতীয় দলের হয়ে ১৫২ ম্যাচে ৮৫ গোল করে জাতীয় বীরের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি।

এবারের বিশ্বকাপে ২ ম্যাচে ৪ গোল করে শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় সবার ওপরে থাকা এই তারকার জীবনকথা লিখেছেন সেলিম কামাল

পুরো নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো দস সান্তুস আভেইরো। জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরাতে। বাবা জোসে দিনিস আভেইরো ও মা মারিয়া ডোলোরেস দস সান্তোস আভেইরো।

মাত্র তিন বছর বয়স থেকে রোনাল্ডো ফুটবলের সংস্পর্শে আসেন। ছয় বছর বয়স থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলতে শুরু করেন। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথমে ‘আন্দোরিনহা’ নামে একটি অপেশাদার দলে তার ফুটবল জীবন শুরু করেন, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন। ১৯৯৫ সালে, দশ বছর বয়সেই পর্তুগালে তার সুনাম ছড়াতে থাকে।

ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার ৭ নম্বর জার্সি পরা ৩৩ বছর বয়সী রোনাল্ডো এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলোয়াড়। তিনি পর্তুগিজ ফুটবলার স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ এবং পর্তুগাল জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে থাকেন।

বিশেষজ্ঞের মতে, রোনাল্ডো বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে একজন। এমনকি সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে তার নামই উঠে আসে সবার আগে।

রোনাল্ডো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড়- যিনি ২০০৭ সালে প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ব্যালন ডিঅর জেতেন।

তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি এ পুরস্কার ৫ বার জেতেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট পান। ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন।

রোনাল্ডো শীর্ষ ইউরোপিয়ান লীগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড়ু যিনি পরপর দুই মৌসুমে ৪০ গোল করেছেন, রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ গোল করেছেন।

এ ছাড়া তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিটপ্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারের ৬০০তম গোল করেন।

রোনাল্ডো বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ১০০ গোল করার রেকর্ড গড়েন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়- যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেন।

এ ছাড়া তিনি এই আসরে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ড গড়েন এবং ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন যা আরেকটি রেকর্ড। রোনাল্ডোই একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ১ থেকে ৯০ প্রত্যেক মিনিটেই গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

২০০৩ সালের আগস্টে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক ঘটে। জাতীয় দলের হয়ে শতাধিক ম্যাচ খেলা এই ফরোয়ার্ড পর্তুগালের হয়ে খেলা সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটি আয়ত্ত করে নিয়েছেন।

২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায় গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন এবং ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

রোনাল্ডো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়। তার দানশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী অসহায় মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য বহুল প্রশংসিত। সম্প্রতি এক জরিপে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ফিলিস্তিনের একটি সংস্থা তাকে পার্সন অব দ্য ইয়ার ২০১৬ প্রদান করে।

তিনি ২০১১ জয় করা সোনার বুট ফিলিস্তিনের দরিদ্র শিশুদের জন্য নিলামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সিরিয়াতে শরণার্থীদের ৫ হাজার ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন।

ইসরাইলি ফুটবলারদের সঙ্গে জার্সি বদল এবং করমর্দন করেননি। কারণ তিনি অত্যাচারীদের অপছন্দ করেন।