খেলা

মরক্কোর সাথে স্পেন ও ইরানের সাথে পর্তুগালের ড্র

By Daily Satkhira

June 26, 2018

খেলার খবর: মরক্কোর বিপক্ষে দুই দফা পিছিয়ে দুই বারই ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা ফেরাল স্পেন। পর্তুগালকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে উঠল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

কালিনিনগ্রাদে সোমবার রাতে ‘বি’ গ্রুপের স্পেন-মরক্কো ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। একই সময়ে সারানস্কের মরদোভিয়া অ্যারেনায় ইরানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে পর্তুগাল।

পাল্টাপাল্টি গোলে শুরু থেকে জমে ওঠে লড়াই।

চতুর্দশ মিনিটে মাঝমাঠে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও সের্হিও রামোস নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করতে গিয়ে তালগোল পাকান। সেই সুযোগে বল কেড়ে দ্রুত ছুটে ডি-বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়ার পায়ের নিচ দিয়ে জালে পাঠান ফরোয়ার্ড খালিদ বুতাইব।

পাঁচ মিনিট পরই সমতা ফেরায় স্পেন। দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাঁ-দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে কাটব্যাক করেন ইনিয়েস্তা। ফাঁকায় বল ধরে ঠাণ্ডা মাথায় জালে পাঠান ইসকো।

২৫তম মিনিটে আবারও স্পেনের রক্ষণে ভীতি ছড়ান বুতাইব। তবে এ যাত্রায় ডি-বক্সে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ৩৭তম মিনিটে ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন সের্হিও বুসকেতস।

শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকা ইনিয়েস্তা বিরতির খানিক আগে আবারও বাঁ-দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোলমুখে বল বাড়ান। কিন্তু আসরে এখন পর্যন্ত তিন গোল করা দিয়েগো কস্তা পা লাগাতে পারেননি।

বিরতির পর স্পেনের রক্ষণে কিছুটা চাপ বাড়ানো মরক্কো ৫৪তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না; ডি-বক্সের বাইরে থেকে মিডফিল্ডার নুরেদ্দিন আমরাবাতের দূরের পোস্টে নেওয়া বিদ্যুৎ গতির শট ক্রসবারে লেগে ফেরে।

৮১তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় মরক্কো। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল অনেকটা লাফিয়ে হেডে জালে পাঠান বদলি হিসেবে নামা ইউসেফ এন-নেসাইরি।

নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে দলকে সমতায় ফেরান কিছুক্ষণ আগে বদলি নামা ইয়াগো আসপাস। ডান দিক থেকে দানি কারভাহালের ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো ক্রসে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান সেল্তা এই ভিগোর এই ফরোয়ার্ড। প্রথমে অফসাইডের পতাকা তুলেছিলেন সহকারী রেফারি। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি।

ইরানের সঙ্গে ড্র করে শেষ ষোলোতে পর্তুগাল

আগের দুই ম্যাচে দ্যুতি ছড়ানো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলেন। তবে বিশ্বকাপে টিকে গেছে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ইরানের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পৌঁছেছে শেষ ষোলোতে। একই সময়ে অন্য ম্যাচে মরক্কোর সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ সেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেছে স্পেন।

সারনস্কে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি ড্র হয়েছে ১-১ গোলে। প্রথমার্ধে পর্তুগালকে এগিয়ে নেন রিকার্দো কারেসমা। ম্যাচের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান করিম আনসারিফার্দ।

মরদোভিয়া অ্যারেনায় মঙ্গলবার শুরুতে ভুগেছে ইরানের রক্ষণ। গোলরক্ষকের হাত থেকে ফস্কেছে বল। তাড়াহুড়া করে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের বল তুলে দেনে ডিফেন্ডাররা। তবে তার সুযোগ কাজে লাগোতে পারেনি পর্তুগাল।

দশম মিনিটে ডি-বক্সে আসা বল অযথা বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ডিফেন্ডার সাইদ এজাতোলাহি তালগোল পাকান, বল পেয়ে যান মারিও জোয়াও। তবে তার শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেলে বেঁচে যায় ইরান।

পায়ে অনেক বেশি সময় বল রাখা পর্তুগাল ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। আক্রমণে গতির অভাব খুব ভুগিয়েছে তাদের। ডি-বক্সে রোনালদোকে লক্ষ্য করে আসা প্রায় প্রতিটি বল কোনো না কোনোভাবে ঠেকিয়ে দেয় এশিয়ার দলটি।

৩৪তম মিনিটে প্রথমার্ধে নিজেদের সবচেয়ে ভালো সুযোগ পায় ইরান। জাহানবখশের ফ্রি-কিকে গোলরক্ষক বরাবর হেড নিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন এজাতোলাহি।

দারুণ এক গোলে ৪৫তম মিনিটে পর্তুগালকে এগিয়ে নেন কারেসমা। সেদ্রিক সোয়ারেসের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ খেলে একটু এগিয়ে গিয়ে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে বল জালে পাঠান এই ফরোয়ার্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ আসে আগের দুই ম্যাচে ৪ গোল করা রোনালদোর সামনে। কিন্তু পর্তুগিজ অধিনায়কের পেনাল্টি বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আলি বেইরানভান্দ। রোনালদোকেই ফাউল করা হলে ভিডিও ফুটেজ দেখে স্পট কিকের নির্দেশ দিয়েছিলেন রেফারি।

পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারা রোনালদো হঠাৎ করেই যেন মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। রেফারি ভিডিও রিপ্লে দেখে ৮৩তম মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডকে হলুদ কার্ড দেখান। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে বুকে আঘাত করায় লাল কার্ডও দেখতে পারতেন পাঁচবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়।

গোলের জন্য মরিয়া ইরান শেষের দিকে আক্রমণে শক্তি বাড়ায়। তা কাজেও লেগে যায়। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরায় ইরান। ডি-বক্সে সেদ্রিকের হ্যান্ডবলের ভিডিও ফুটেজ দেখে স্পট কিকের নির্দেশ দিয়েছিলেন রেফারি। বদলি হিসেবে নামা আনসারিফার্দের শট ফেরানোর কোনো সুযোগই ছিল না গোলরক্ষকের।

পরের মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছিল মেহদি তারেমির সামনে। খুব কাছে থেকে এই ফরোয়ার্ড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি শট। গোলটি হলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেত ইরান। বিদায় নিত ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।

পয়েন্ট আর গোল পার্থক্য সমান হলেও স্পেনের চেয়ে গোল কম করায় রানার্সআপ হয়ে নকআউট পর্বে গেছে পর্তুগাল।

আগামী শনিবার শেষ ষোলোতে ‘এ’ গ্রুপ সেরা উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলবে পর্তুগাল। পরদিন ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ রাশিয়ার বিপক্ষে খেলবে স্পেন।