জাতীয়

ভোট দিচ্ছে গাজীপুর ভোটাররা

By Daily Satkhira

June 26, 2018

প্রথমবারের মত দলীয় মার্কায় সিল দিয়ে সিটি করপোরেশনের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিচ্ছেন গাজীপুরের ১১ লাখ ৩৭ হাজার ভোটার।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে এ সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট শুরু হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে জানিয়ে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেছেন, শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই ভোট শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

“কারো কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। বিএনপির প্রার্থীর কাছ থেকে ভোটের আগে দুয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।”

আবহাওয়া অফিস ভোটের দিন বৃষ্টির আভাস দিয়ে রেখেছে গাজীপুরে। সকালে ভোট শুরুর আগে বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। তবে ভোট শুরুর পর প্রথম তিন ঘণ্টায় নির্বাচনের পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি আবহওয়ায়।

দিনের শুরুতে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি মোটামুটি। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি আরও বাড়বে এবং বিকাল ৪টা পর্যন্ত  স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট চলবে বলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আশা করছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে সব মহলের নজর এখন গাজীপুরের দিকে। ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রধান দুই দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও এ নির্বাচনে নিজেদের প্রমাণ করতে চায়।

কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সেই ধরনের কিছু হলে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় অন্য তিন সিটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে তারা।

অন্যদিকে তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিকে হেয় করতে এসব অভিযোগ তুলছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক  সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ারর্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেছেন, তারাও গাজীপুরের ভোটের দিকে তাকিয়ে আছেন।

“সর্বশেষ খুলনার নির্বাচনে কিছু অনিয়ম দেখা গেছে, যদিও তা ফলাফলে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু গাজীপুরে একটা মডেল নির্বাচন দেখতে চাই আমরা।”

এক নজরে গাজীপুর সিটি নির্বাচন

>> ওয়ার্ড: সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি।

>> প্রতিদ্বন্দ্বী: মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন।

>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২৫টি ভোট কেন্দ্র, তাতে ভোট কক্ষ ২৭৬১টি।

>> ভোটার: ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী

>> ইভিএম: ছয়টি কেন্দ্রে (১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২) ভোট চলছে নতুন ইভিএমে।

>> ফলাফল ঘোষণা: গণনা শেষে ফল ঘোষণা হবে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে।  

এ সিটির মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের বিপরীতে এবার ৩৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলমকে বেছে নিয়ে আওয়ামী লীগ।

৭০ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা হাসান সরকার এরশাদের সামরিক শাসনামলে দুই দফায় সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন টঙ্গী পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসাবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান সরকার এক মেয়াদে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।

তার চেয়ে ৩১ বছর কম বয়সী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম গত মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চেয়ে আলোচনায় আসেন।

গতবার বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে বাদ দিয়ে এবার তরুণ এই নেতাকে নির্বাচনী টিকেট দেয় ক্ষমতাসীন দল।

অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।

মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও আলোচনা চলছে সেই নৌকা আর ধানের শীষ ঘিরেই।

দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের সংসদীয় আসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া প্রাধান্যের কারণে ঢাকার লাগোয়া এ এলাকাকে নিজেদের ঘাঁটি বলেই মনে করত ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু ২০১৩ সালের সিটি নিরাব্চনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় তাদের সেই কর্তৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।

এবারের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান সরকার বলেছেন, তিনি জয়ের ব্যাপরে শতভাগ আশাবাদী। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে তিনি মনে করছেন না।

সকালে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বছিরউদ্দিন উদয়ন একাডেমী কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে মেরে বের করে দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইসির কাছে অভিযোগ করেও তিনি ফল পাচ্ছেন না।

“আমি শুধু বলব, আমি নির্বাচনে আছি থাকব। সর্বশেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল দেখে মন্তব্য করব আমি। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।”

ফলাফল মেনে নেবেন কি না- এই প্রশ্নে হাসান সরকার বলেন, “ফলাফল জনগণ যদি মেনে নেয় আমিও মেনে নেব।”

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। জনগণের যে রায় সেটা আমার মেনে নেওয়া উচিৎ। গাজীপুরের উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ নৌকাকে বিজয়ী করবে। জনগণের সেবক হিসেবে আমি তাদের রায় চাই।”

বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে তার ভাষ্য, “তারা ভোটের শুরু থেকে এ ধরনের অভিযোগ করে আসছে। এ ধরনের অভিযোগ করে তারা গাজীপুরের মানুষকে দোষারোপ করছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা চেষ্টা করছে।”