খেলা

সংকল্পবদ্ধ আর্জেন্টিনা প্রস্তুত ফ্রান্সও

By Daily Satkhira

June 30, 2018

মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামের সামনে রয়েছে স্পার্তান যোদ্ধার মূর্তি। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে দাবি ছিল সেই যোদ্ধার মতো লড়াইয়ের।

ঠিকই সেই যুদ্ধজয়ে নকআউট পর্বে নাম লিখিয়েছে আর্জেন্টিনা।

আজ শেষ ষোলোর সেই মহারণের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। ভেন্যু কাজান এরেনা। তাতারস্তানের রাজধানী এই কাজান। যে তাতার যোদ্ধাদের খ্যাতি ইতিহাসের পাতায় পাতায়। আজ লিওনেল মেসির দলের কাছে আবারও সময়ের সেই অভিন্ন দাবি। প্রতিপক্ষ প্রবল—তাতে কী! লিওনেল মেসির মতো এক জাদুকর থাকলে কোনো কিছুই যে অসম্ভব নয়!

শেষ ষোলোর বাধা টপকে আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণও তেমনি অলৌকিক কল্পনা নয় মোটেও।

মস্কোর ৮০০ কিলোমিটার পূর্বে এই কাজান; সভ্যতার এক তীর্থ ভোলগা নদীর পাড়ে। মস্কো-সেন্ট পিটার্সবার্গের চেয়ে বিশ্বকাপের আমেজ এখানে বেশি।

রাস্তার পাশে বড় বড় হোর্ডিং দেখা যায় বিশ্বকাপের। প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে কাজানে খেলতে আসা দলগুলোর বড় বড় পোস্টার সাঁটা। শহরের মাঝখানে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর তিন তলা বাড়ির দেয়ালজুড়ে বিশাল ওই ছবিটাও রয়েছে এখনো। গেল বছর কনফেডারেশন কাপের সময় তৈরি করা হয়েছিল যা। সেই শহরেই মেসির আজ অমরত্বের পথে আরেক পদক্ষেপ ফেলার চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টিনার ৩২ বছরের অপ্রাপ্তি আর নিজের ক্যারিয়ারের একমাত্র হাহাহার বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের পথে আরেকটু এগোনোর উপলক্ষ।

ফ্রান্স অবশ্য এবারের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। ফুটবলারদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য বিবেচনায় সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরা দল। ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে এসেছে তারা; তবে নজরকাড়া পারফরম্যান্স তেমন ছিল না। কাল কাজানের সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক-কোচ বারবারই তাই আওরে যান একই বুলি—বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে এখান থেকেই।

‘বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে নকআউট পর্ব থেকে। এটি আমাদের জন্য বাড়তি প্রেরণা। প্রতি খেলোয়াড়ের জন্য প্রতিটি পাস, প্রতিটি থ্রো ইন, প্রতিটি বল দখলের লড়াই হতে পারে এই বিশ্বকাপের শেষ। আর প্রতিপক্ষ যখন আর্জেন্টিনার মতো দল, তখন নিজেদের সামর্থ্য ছাড়ানো কিছুই আমাদের করতে হবে। সে জন্য আমরা প্রস্তুত’—বলেছেন ফ্রান্স অধিনায়ক লরি। কোচ দেশম বলেছেন তাই, ‘নতুন বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে এখন। ইউরোতে আমরা দেখেছি, প্রথম রাউন্ডে খুব ভালো খেলেও নকআউট পর্বে এসে ছিটকে গেছে কোনো কোনো দল। আমরা তাই সতর্ক আছি। মনোযোগ দিচ্ছি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে। ’

একইভাবে মেসি বন্দনাও দুজনের অভিন্ন সুরে। কোচ দেশম ১৯৯৮ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালে খেলেছেন ব্রাজিলের রোনালদোর বিপক্ষে। তাঁর সঙ্গে মেসিকে মিলিয়ে করা প্রশ্নে দেশমের জবাব, ‘সেবারের রোনালদো এবং এবারের মেসির মধ্যে অবশ্যই মিল রয়েছে। দলে ওদের প্রভাবের দিক বিবেচনায়। তবে সেটি ছিল ফাইনাল, এটি শেষ ষোলোর এক ম্যাচ। আমরা এখন মনোযোগ দিচ্ছি কাল কিভাবে মেসিকে সামলানো যায়। ’ সেই কাজ যে সহজ নয়, তা আবার মেনে নিচ্ছেন লরি। সে জন্য নিজেদের করণীয়ও বলেছেন তিনি, ‘আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ খেয়াল করলে দেখবেন, ওদের আরো অনেক ভালো ফুটবলার রয়েছে। মেসি নিজেও দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঝলসে ওঠে। সেটি আর্জেন্টিনায় যেমন, তেমনি বার্সেলোনাতেও। আমাদের তাই ব্যক্তিগত লড়াইগুলোতে জিততে হবে; সম্মিলিতভাবেও মেসি ও আর্জেন্টিনাকে সামলাতে হবে। ’

হোর্হে সাম্পাওলির সময়ে কোনো সময়ই পর পর দুই ম্যাচ একই একাদশ নিয়ে খেলেনি আর্জেন্টিনা। আজ প্রথমবারের মতো তা হতে পারে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে একাদশ নিয়েই মাঠে নামবে হয়তো দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নররা। আর ১৯৯৮-এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স গেল ম্যাচের বিশ্রাম দেওয়া তারকাদের ফিরিয়ে নামবে পূর্ণশক্তিতে।

এমনিতে লাতিন আমেরিকার দলের বিপক্ষে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। ওই মহাদেশের দলের কাছে সর্বশেষ আট মুখোমুখিতে হারেনি তারা। সর্বশেষ হার? আর্জেন্টিনার কাছে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে। লাতিন আমেরিকান দলে বিপক্ষে সর্বশেষ সাত ম্যাচে কোনো গোল খায়নি। সর্বশেষ গোল করেছিলেন ব্রাজিলের কারেকা, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার দুই মুখোমুখিতে দুবারই অবশ্য জয় আলবিসেলেস্তেদের। আর দুবারই ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। ইতিহাসের প্রেরণা তাই ফ্রান্সের মতো তাদেরও রয়েছে।

আরেকটি অনুপ্রেরণা হতে পারে ‘বজ বুলদ্রাবাস’। এটি তাতারস্তানের আন-অফিসিয়াল স্লোগান। যার বাংলা ‘আমরা পারি’। সেই মন্ত্র জপেই তো আজ মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। এবং অতি অবশ্যই লিওনেল মেসি!