জি. এম আবুল হোসাইন : সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজার থেকে গোবিন্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কি.মি.রাস্তা লোক ও যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু সাধারন মানুষই নন, এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্র- ছাত্রী, শিশু ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের রয়েছে এই রাস্তার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ । সিমান্তবর্তী একমাত্র যোগাযোগের রাস্তা হওয়ায় কামারবায়সা, আইচপাড়া, বেলেডাঙ্গা, হঠাৎগঞ্জ, কাকডাঙ্গা, ভাদিয়ালি, রুদ্রপুর, গাড়াখালি, সহ আরো ১০ – ১২টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। সংস্কারের অভাবে রাস্তাটিতে যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন আগে গোবিন্দকাটি রোডে পল্লী বিদ্যুত অফিসের সামনে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ছে এবং চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে রাস্তার দুপাশে ছোট- বড় গর্ত সহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তার কিছু কিছু জায়গা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে ঘের-ভেড়ির কারণে পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। যার কারণে রাস্তা যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ায় ভ্যান, নছিমন, সাইকেল, মোটরসাইকেল সহ অন্নান্য যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। স্থাণীয় কৃষকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সেই সাথে দূরবর্তী এলাকার মানুষ উৎপাদিত পন্য পরিবহনের কারনে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন ঝাউডাঙ্গা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা বেচার জন্য এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যার ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এলাকার পথচারীরা। গোবিন্দকাটি গ্রামের ঝাউডাঙ্গা কলেজের ছাত্রী মোছা. খাদিজা আক্তার বন্যা বলেন, এরাস্তা দিয়ে যাতায়াত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই দেখি দূর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের জন্য আমরা একাধিকবার চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের বার বার আশ্বস্ত করলেও আজো রাস্তাটি সংস্কার হয়নি। ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, শিশু সহ জনসাধারণ এরাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় যেন দূর্ঘটনায় না পড়ে সেজন্য এলাকাবাসীর চাহিদার প্রেক্ষিতে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। গোবিন্দকাটি গ্রামের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির নেতা মো. আব্দুল মালেক বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ হয় তার চেয়ে অনেক কম। এছাড়া রাস্তা নির্মাণের সময় গুণগত মানে ত্রুটি থাকার কারনে তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। তার উপর ঘের ভেড়ির কারণে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী অপরিকল্পিতভাবে তৈরি মৎস্য ঘের। স্থানীয় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধার্থে মেইন রোড দখল করে ভেড়ি বাঁধ দিচ্ছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ থাকছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝাউডাঙ্গা কলেজর এক প্রভাষক জানান, ইচ্ছামত নিয়ম বর্হিভূত ও অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের তৈরি করা হয়েছে। ঘের মালিকেরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে রাস্তা দখল করে এমনটি করেছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটির উপর প্রায় হাঁটু পানি জমে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে আমাদের চলাচলে চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই স্থানীয় ঘের মালিকরা আমাদেরকে নাশকতাসহ বিভিন্ন হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখে।
ঝাউডাঙ্গা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাস্টার তারকনাথ পাল বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অপরিকল্পিতভাবে তৈরি স্থানীয় মৎস্য ঘেরের কারণে রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রাস্তার দু’পাশে তৈরি ঘের-ভেড়িতে বাড়তি পাইলিং দেওয়ারও আলাদা বাজেট না থাকায় ঠিকাদার কাজ করতে বিলম্ব করছে। ব্যাপারে এলজিইডি’র বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা হয়েছে। এমনকি সদর এমপি’র সাথেও রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি দ্রুতই ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এবিষয়ে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মো. রমজান আলী বিশ্বাস বলেন, ঝাউডাঙ্গা- গোবিন্দকাটি রাস্তায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতে যে সমস্যা হচ্ছে তার মুলে রয়েছে অযাচিত ঘের-ভেড়ি। সরকারি রাস্তার উপর ব্যক্তিগত ঘের-ভেড়ি তৈরি নিঃসন্দেহে ন্যাক্কারজনক কাজ। প্রশাসনের এবিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এবিষয়ে এলাকাবাসী অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।