নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের উপস্থিতিতে নারী অপহরণের পর ধর্ষণ ও মাদক মামলার আসামীর নেতৃত্বে এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধির বাড়ির গেট ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় তার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনার পর ওই প্রতিবন্ধি পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। খুলনা বেতারের এক সময়কার তুখর গজল ও সঙ্গীত পরিবেশক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকারপাড়ার নজরুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা খাতুন জানান, সরকারপাড়ায় কাটিয়া মৌজায় চার কাঠা জমি কিনতে চাইলে তাদেরই দোকানের কর্মচারি আব্দুস সামাদ দলিল লেখকের সঙ্গে যোগসাজস করে ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ৯৬৭২ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা মূলে একটি দলিল সম্পাদন করেন। দলিলে কৌশলে সামাদ তার নাম বসিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তাকে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে সামাদ। জমি কেনার পরপরই তাতে বাড়ি তৈরি করে নিরাপত্তার জন্য লোহার গেট লাগানো হয়। পরবর্তীতে আব্দুস সামাদ তাদের (তাছলিমা) ভাড়া দোকান থেকে সমস্ত মালামাল তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র হস্তান্তর করে দেন সামাদ। এমনকি তার ছেলের মোটর সাইকেলটি বিক্রি করে দিয়ে আত্মসাৎ করে। তাছলিমা খাতুন আরো বলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার চাঁদখালি গ্রামের আব্দুস সামাদ সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের এসআই মোমরেজ হোসেনের ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল দায়েরকৃত বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার(মাদক) প্রধান আসামী। মামলাটি বর্তমানে জজ কোর্টে বিচারাধীন। এ ছাড়া কালিগঞ্জের চাঁচাই গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী মাইমুনা আক্তার মুন্নি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার(২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সদর থানার জিআর-৯৩৮/১৭) এজাহারভুক্ত আসামী। টাকা না দিয়ে জমি দাবি করলে হুমকি দেওয়ায় তিনি ২০১৭ সালের ২৪ আগষ্ট সদর থানায় ১৫০৪ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে তিনি সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দেঃ ৫২/১৮ মামলা (জালিয়াতি)করেন। মামলার খবর পেয়ে তাকে হুমকি দেওয়ায় গত ২১ মে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন। তাতেও হুমকি বেড়ে যাওয়ায় সামাদের বিরুদ্ধে তিনি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ১৪ জুন পিটিশন ৫৫৪/১৮ মামলা করেন। পথেঘাটে জীবননাশের হুমকি, চাঁদা দাবি ও বাড়িতে এসে আলমারি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গত ৬ জুন তিনি আমলী আদালতে সামাদ ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা(সিআরপি-১১৬/১৮) করেন। বিচারক সিআইডি’র একজন সহকারি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাতে আগামি ১৪ আগষ্টের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, টাকা না দিয়ে জমি দখলের পায়তারার অংশ হিসেবে আব্দুস সামাদ গত ৪ জুন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় পিটিশন মামলা করে(৯৬২/১৮) জমিতে তার বসতবাড়ি ও বৈদুতিক লাইন ও রাস্তা আছে দাবি করেন। নোটিশ দেওয়ার আগেইগত ১৫ জুন বিকেল তিনটার দিকে সামাদ স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সহায়তায় স্থানীয় কাজী মোস্তাক, আব্দুল গফফার কালু, সরকারপাড়ার সালাম, মধ্য কাটিয়ার হান্নান, পুরাতন সাতক্ষীরার আবুল কাশেমকে নিয়ে তার বাড়ির লোহার গেট ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর করা গেটটি নিয়ে যায় সামাদ। বিষয়টি তিনি সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি। একপর্যায়ে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্রাইম সেকশানে গত ২১ জুন অভিযোগ করলে গেট লাগিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সদর থানার উপপরিদর্শক হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৩ জুন উপপরিদর্শক হাসান ঘটনাস্থল পরিদশন করে গেট নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে সমস্যা দেখা দিলে তাকে অবহিত করার কথা বলেন। সে অনুযায়ি তিনি গত ২৮ জুন শুক্রবার সকালে গেট লাগিয়ে ফেলে ভাঙচুর হতে পারে এমন আশঙ্কায় থানায় ১৫০৫ নং জিডি করেন। শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে সামাদের দায়েরকৃত পিটিশন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার সহকারি উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার লোহার গেট ভাঙচুর করে কাজী মোস্তাক, আব্দুল গফফার কালু, সামাদসহ কয়েকজন। প্রতিবাদ করায় তার ছেলে মনিকে থানায় ধরে নিয়ে আটক রাখেন সহকারি উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। সন্ধ্যায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ বলেন, তিনি টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন। তাছলিমা তাকে জমি না দেওয়ার জন্য নানাভাবে হয়রানি করছে। তবে গেট ভেঙে দিয়ে জমিতে যাওয়ার রাস্তা বের করা ছাড়া তার কোন উপায় নেই বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে সদর থানার সহকারি উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৪৫ ধারার নোটিশ ভঙ্গ করে গেট লাগানোয় তার উপস্থিতিতে সামাদসহ কয়েকজন গেট ভেঙে দিয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে নোটিশ দেওয়ার আগে পুরাতন গেটটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। সদর থানার উপপরিদর্শক হাসান আলী জানান, পুলিশ সুপারের ক্রাইম সেকশান থেকে প্রতিপক্ষের ভেঙে দেওয়া গেটটি নতুন করে বসানোর জন্য তাছলিমা খাতুনকে সহযোগিতা করতে বলা হয়। গেট লাগানোর বিষয়টি তিনি জানতে পারার আগেই প্রতিপক্ষ সামাদের নেতৃত্বে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মদ জানান, ১৪৫ ধারার নোটিশ না মেনে গেট লাগানোয় পুলিশ মাকে না পেয়ে ছেলেকে ধরে এনেছে। তাছলিমা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে মানে না। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে এভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় ভাঙচুর করা আইন সম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুচলেকা নিয়ে মায়ের জিম্মায় ছেলে মনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।