খেলা

বেলজিয়ামের অভ্যুদয় নাকি জাপানি সূর্যোদয়

By Daily Satkhira

July 02, 2018

খেলার খবর: সোনালি প্রজন্ম নিয়ে রাশিয়ায় বেলজিয়াম। এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইন, থিবো কর্তোয়াদের মতো তারকা নিয়ে শিরোপাস্বপ্নে বিভোর তারা। জাপান অবশ্য শিরোপা নিয়ে ভাবছে না। এত দিন শেষ ষোলোর গণ্ডি পার হতে না পারা দলটির কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়াই বিশেষ কিছু। সেন্টার ব্যাক মায়া ইউসিদা তাই বাস্তববাদী, ‘আমরা কখনো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলিনি। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ, যেখানে জিতে ইতিহাস গড়তে চাই সবাই।’

বেলজিয়ামের ফুটবল ইতিহাস সমৃদ্ধ অনেক। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলেছে সেমিফাইনাল। গত আসরে পৌঁছে শেষ আটে। টানা ২৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকায় ফিফা র্যাংকিংয়ে এখন তিনে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স ও ২০১০-এ স্পেনের পর নতুন দল হিসেবে শিরোপাস্বপ্ন দেখতেই পারে বেলজিয়াম। তবে কোচ রবার্তো মার্তিনেস সবার আগে পেরোতে চান জাপান বাধা, ‘টেকনিক্যালি জাপানের ফুটবল অনেক শক্তিশালী। ৯০ মিনিট একইভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে জাপান। ওরা ছেড়ে কথা বলবে না। আর জাপান জিতলে বিস্ময়েরও কিছু হবে না।’

ইতিহাসের দিকে তাকিয়েই মার্তিনেজের এমন সতর্কতা। দুই দলের পাঁচ দেখায় বেলজিয়াম জিতেছে শুধু এক ম্যাচ। সেটাও সবশেষ দেখায় গত বছর নভেম্বরে। রোমেলু লুকাকুর গোলে স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম। ম্যাচের স্মৃতি ধূসর হয়নি মার্তিনেসের, ‘উপভোগ্য এক ম্যাচ খেলেছিলাম গত বছর। ওদের কোচ বদল হয়েছে কিন্তু মানসিকতা একই রয়েছে।’ বিশ্বকাপের মতো গত ইউরোয় ফেভারিট ছিল বেলজিয়াম। স্বপ্ন ভাঙে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের কাছে হেরে। ১৩ মিনিটের গোলে উড়ন্ত সূচনার পরও বিধ্বস্ত ১-৩ ব্যবধানে। এর পর থেকে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় উঠছে বেলজিয়াম। ১০ ম্যাচের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে গ্রুপে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। পয়েন্ট হারিয়েছে মাত্র ২টি আর গোল ৪৩টি। প্রীতি ম্যাচে দাপট দেখানো বেলজিয়াম বিশ্বকাপ শুরু করে পানামাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে।

এরপর তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ৫-২ আর ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ১-০ গোলে। গ্রুপ পর্বে তেমন পরীক্ষায় পড়তে না হওয়াটা ভোগাতে পারে আজ। প্রতিপক্ষ জাপান হলেও মার্তিনেস সেরাটা খেলার কথা বললেন এ জন্যই, ‘এ ধরনের টুর্নামেন্টে সহজ কোনো অর্ধ নেই। গত ইউরোয় বলা হচ্ছিল বেলজিয়াম সহজ পথে পড়েছে অথচ আমরা হেরে যাই ওয়েলসের কাছে। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবছি না, জাপানকে হারানোই লক্ষ্য এখন।’

বেলজিয়ামের উল্টো ছবি জাপানে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজেদের গ্রুপে হারিয়েছে ১০ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরে ইস্ট এশিয়ান কাপে দক্ষিণ কোরিয়া বিধ্বস্ত করে ৪-১ গোলে। নিষ্প্রভ প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেও। প্যারাগুয়েকে ৪-২ গোলে হারানোটা ছিল ২০১৮ সালে তাদের প্রথম জয়। আগের কোচ বদলে নিয়োগ দেওয়া হয় আকিরো নিশিনোকে। গ্রুপে পোল্যান্ড আর কলম্বিয়া থাকায় জাপান ছিল আন্ডারগড। সেই জাপানের সূর্যোদয় বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দেয় কলম্বিয়াকে, যা ছিল বিশ্বকাপে কোনো লাতিনের বিপক্ষে এশিয়ান দলের প্রথম জয়। সেনেগালের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ড্রর পর হার পোল্যান্ডের সঙ্গে। সেনেগালের সমান পয়েন্ট হলেও কম হলুদ কার্ডে শেষ ষোলোর পৃথিবীতে জাপান। বেলজিয়ামকে ভয় করে নামছেন না সেন্টার ব্যাক মায়া ইউসিদা, ‘লুকাকুকে থামাতে হবে আমাদের। আমি একাই পারব না, দল হয়ে থামাতে হবে। তেমনি দল হয়ে আক্রমণও করতে হবে। এটা করতে পারলেই সম্ভব প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা।’

দুই ম্যাচে চার গোল করা রোমেলু লুকাকু চোট পেয়েছিলেন সামান্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্রামে ছিলেন তাই। আজ শতভাগ ফিট হয়ে ফিরবেন তিনি। কোচ রবার্তো মার্তিনেজকে স্বস্তি দিচ্ছে অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানি আর থমাস ভারমিউলেনের পুরো ফিট হয়ে ওঠা। সেরা তারকা এডেন হ্যাজার্ডও ছন্দে। দুটো অ্যাসিস্ট হয়ে গেছে কেভিন ডি ব্রুইনেরও। মার্তিনেস তাই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বেলজিয়ামকে, ‘নক আউটে সবাই ভয়ংকর, বিশ্বের সেরা ১৬ দল আছে এখানে। নিজেদের ওপর আস্থা আছে আমাদের। এত দিন যেভাবে খেলে এসেছি, সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’ তাহলেই সম্ভব বেলজিয়ামের অভ্যুদয়।