দেশের খবর: মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমের রাত ১২টার পর লেনদেন বন্ধ রাখার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে গভীর রাতে যেসব এজেন্ট বা গ্রাহকের মোবাইল হিসেবের মাধ্যমে লেনদেন হয় সেসব হিসাব কঠোর নজরদারির অধীনে রয়েছে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী একথা জানান।
মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কমছে এ কে এম রহমতুল্লাহ এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যাচ্ছে না বরং বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মসংস্থান-সহায়ক এবং বিনিয়োগবান্ধব মদ্র্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৩ সালের জুন থেকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০১৩ অর্থ-বছরে শতকরা ১০ দশমিক ৮৫ ভাগ হতে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ ভাগ। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে অর্থবছর ২০১৭ এর জিডিপি’র উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। ওই অর্থবছরের মোট বিনিয়োগের শতকরা ৭৫ দশমিক ৭ ভাগই বেসরকারি বিনিয়োগ। জিডিপি’র মোট বিনিয়োগ ২০১৬ অর্থ বছরে শতকরা ২৯ দশমিক ৭ ভাগ হতে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থ বছর ২০১৭ এ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫ ভাগ। একই সাথে সরকারি বিনিয়োগও ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ এর শতকরা ৬ দশমিক ৬ ভাগ হতে ২০১৭ এ জিডিপি’র ৭ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে। কাজেই মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋনের প্রবাহ কমে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না।
আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার থেকে ব্যাংক ঋণের সুধের হার নির্ধারণ করা হয় না। তবে ব্যাংক মালিকদের সাথে মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা করি। কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে ব্যাংক ভেন্ডর বা মালিকরা সুদের হার এক ডিজিটে আনার তারিখও দিয়েছেন। সেটা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, কিছুটা হয়েছে। সত্তরই সেটা পুরোপুরি কার্যকর হবে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছিল, উক্ত লক্ষ্যমাত্রার আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬২৭ দশমিক ২৫ কোটি টাকা।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা এবং উক্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত সাফল্য ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৬ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা।
মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মোবাইল ফিনানসিয়াল সার্ভিসের(এমএফএস) আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২৩৪ কোটি টাকা আয় হলেও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৬৭ কোট টাকা। অর্থাৎ গত অর্থ বছরে ১৩৩ কোটি টাকা বেশি আয় হয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর পর্যন্ত দেশের উন্নয়নের কাজে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের পরিমান ২৪ হাজার ১৫৭ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তন্মদ্ধে ঋণের পরিমান ১৮ হাজার ৫৫৯ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরেমান ৫ হাজার ৫৯৭ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্যমতে, এসব দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাহায্যের পরিমান (ডিসবাসমেন্ট) ৬ হাজার ১৮৩ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাংকের (আইডিএ) ৭ হাজার ৩৬১ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন, চীন ৯৯৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন, রাশিয়া ৪১৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন, ইউএন সংস্থাসমুহের ১ হাজার ৮৩০ দশমিক ০৪ মিলিয়ন, আইডিবি ৪৫৫ দশমিক ২২ মিলিয়ন, জাপান ২ হাজার ৯৫৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ৩৫০ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন এবং অন্যান্য ৩ হাজার ৮০১ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মোট ২৪ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।