ফিচার

সাতক্ষীরায় ধর্ষণ ও পাচারের মামলায় তিন জনের সশ্রম যাবজ্জীবন

By Daily Satkhira

July 04, 2018

আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরায় দুটি ধর্ষন ও একটি পাচারের মামলায় পৃথক তিন জনের সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এক লাখ জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের কাজী গিয়াস উদ্দীনের ছেলে ধর্ষন মামলার আসামী হাফিজুর রহমান (২৪) ও একই মামলার আসামী অপরজন হলো তালা উপজেলার আঠারই গ্রামের মোকাম মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম মোড়ল (২৫) এবং পাচার মামলার আসামী হলো, কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের কাশেম আলী গাইনের ছেলে গোলাম রসুল গাইন (১২)। মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামী হাফিজুর রহমান তার প্রতিবেশী কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের শেখ মারুফ আহমেদের বাড়িতে কর্মরত ১৭ বছরের এক কাজের মেয়েকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিতো। এরই জের ধরে ২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ওই কাজের মেয়ের ঘরে আসামী হাফিজুর জোর পূর্বক ঢুকে তাকে বিয়ের আশ^াসে ধর্ষন করে। ধর্ষনের পর সে তাকে আর বিয়ে না করে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে ওই কাজের মেয়ে ৫ মাসের অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে। কোন উপায় না পেয়ে সে নিজেই বাদী হয়ে ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ দিন পর এ মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনান্তে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এক লাখ জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এদিকে, ধর্ষনের আরো একটি মামলায় আসামী তালা উপজেলার আঠারই গ্রামের নুর ইসলাম মোড়ল তার প্রতিবেশী ২০ বছরের এক প্রতিবন্ধী নারীকে ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারী রাত ১০ টার দিকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। তার এ ধর্ষন কাজে সহযোগিতা করে একই গ্রামের খায়রুল মোড়ল ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম। ঘটনার পরদিন ১৮ জানুয়ারী ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধীর ভাই মাহবুব মোড়ল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ দিন পর এ মামলায় ৭ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনান্তে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ মামলায় বিচারক অপর দুই আসাশীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন। অপরদিকে, পাচার মামলার আসামী কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের গোলাম রসুল গাইন একই উপজেলার পূর্বনারয়নপুর গ্রামের আব্দুল করিম মল্লিকের মালিকানাধীন কালিগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডের একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। কাজ করার সুবাদে ২০০৫ সালের ২৯ জুলাই তার ছেলে শহিদুল ইসলামকে (৪) পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরন করে ফরিদপুর নিয়ে যায় আসামী গোলাম রসুল। ৩০ জুলাই সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনগনের সহায়তায় পুলিশ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং আসামী গোলাম রসুল আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করে। পরে আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়। এ মামলায় ৯ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি পর্যালোচনান্তে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উক্ত আসামিকে পাচারের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এক লাখ জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পৃথক এই তিনটি মামলার রায়ের সময় আসামিরা সবাই পলাতক ছিলো।