খেলার খবর: ফুটবলের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতে চাননি এমন ফুটবলার বোধহয় কেউ নেই। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না! প্রতিভা, স্কিল এবং অনবদ্য ফুটবল খেলা সত্ত্বেও এমন অনেক ফুটবলারই রয়েছেন ভাগ্য যাদের বিশ্বকাপের গৌরব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কারা রয়েছেন এই তালিকায়।
তালিকার প্রথমেই থাকবে ফ্রেনস পুসকাসের নাম। ইতিহাসের সেরা ফুটবল দলের দলনেতা পুসকাসের হ্যাঙ্গেরি ছিল অপ্রতিরোধ্য, অপরাজেয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত একটি মাত্র পরাজয়! সেটি ১৯৫৪’র বিশ্বকাপ ফাইনালে। এর আগে পরে ৬বছরে কেউ তাদেরকে হারাতে পারেনি।
এরপরেই যিনি রয়েছেন তিনি অবশ্য কিংবদন্তি গোলকিপার। সর্বকালের সেরা গোলকিপার বলেই একে মনে রেখেছে ফুটবলবিশ্ব। রাশিয়ার গোলকিপার লেভ ইয়াসিন। বিশ্বের একমাত্র গোলকিপার যিনি ১৯৬৩ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। স্পিডের জন্য ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ (ব্ল্যাক স্পাইডার) নামে পরিচিত এই গোলকিপার ১৩ বছর দেশের হয়ে খেলেছেন।
গোলকিপার হিসেবে ফুটবলের প্রায় সব পুরস্কার দিয়ে নিজের ওয়ার্ড্রোব সাজালেও বঞ্চিত থেকেছেন বিশ্বকাপ থেকে।
কিংবদন্তি ফুটবলারদের তালিকায় অন্যতম বড় নাম উত্তর আয়ারল্যান্ডের জর্জ বেস্ট। ১৯৬৮ ব্যালন ডি’অর জেতেন এই কিংবদন্তি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ফুটবল বিশ্বকে একাধিক স্বপ্নের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন এই ফুটবলার। কিন্তু দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি বেস্ট।
তালিকায় আছেন ৬৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা পর্তুগিজ লিজেন্ড ইউসোবিও। সেবার তৃতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পর্তুগালকে। অথচ ক্লাব ফুটবলে ডি স্টেফানো ও পুসকাসের রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে তার নৈপূণ্যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে বেনফিকা। যদিও সর্বকালের সেরা পেলের সন্তোসের কাছে ইন্টারকিন্টনেন্টাল কাপে পরাজিত হন।
ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার আগে ফুটবলবিশ্ব আলোড়ন তুলেছিলেন যে কিংবদন্তি ফুটবলার তার নাম জোহান ক্রুয়েফ। নেদারল্যান্ডসের সর্বকালের সেরা এই ফরোয়ার্ড ক্রুয়েফ তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। ‘ক্রুয়েফ টার্ন’ নামে ফুটবল সার্কিটে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে এই কিংবদন্তি ফুটবলারের একটি মুভ। কিন্তু বিশ্বকাপের স্বাদ পাননি এই কিংবদন্তি ডাচ ফুটবলারও।
১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫ টানা তিনবার ব্যালন ডি’অর জয়ের হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি। সর্বকালের সেরা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের একজন তিনি। ‘দ্য কিং’ নামে ফুটবল সার্কিটে পরিচিত এই কিংবদন্তিও কিন্তু বাদ থেকেছেন বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব থেকে। ফ্রান্সের হয়ে প্রায় ২০ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে অনেক চেষ্টা করেও ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছিলেন।
প্লাতিনির সময়েই আরেক সর্বকালের সেরা ব্রাজিলিয়ান জিকো ফুটবল খেলেছেন তৎকালীন সেরা দলটিতে। কিন্তু ১৯৮২ ও ১৯৮৬-তে তারা শিরোপার মুখ দেখতে পারেননি। তালিকার শেষ দুটি নাম যাদের তাদের নিয়ে বর্তমান ফুটবল বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত। এরা যদিও এখনও অবসর ঘোষণা করেননি। তবে ফুটবলবিশ্বে প্রায় সমস্ত রেকর্ড এবং পুরস্কার এদের সামনে মাথা নত করলেও বিশ্বকাপ এদের থেকে দূরে রয়েছে এখনও। আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিওয়েন মেসি এবং পর্তুগাল ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এই তালিকার শেষ দুটি নাম।
৩৩ বছর বয়সী পর্তুগাল ফরোয়ার্ড জিতেছেন পাঁচবার ব্যালন ডি’অর। পাঁচবার ইউরোপ সেরার খেতাবও রয়েছে সিআর সেভেনের ঝুলিতে। জাতীয় ও ক্লাব ফুটবল মিলে ৫০০-র বেশি গোল রয়েছে রোনালদোর ঝুলিতে কিন্তু বিশ্বকাপ এখনও অধরা এই কিংবদন্তির।
নক-আউটে উরুগুয়ের কাছে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল। সেই সঙ্গে এবারের মত শেষ হয়েছে রোনালদোর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ২০১৮ আগে আরও তিনবার বিশ্বকাপের আসরে নেমেও খালি হাতেই ফিরেছেন সিআর সেভেন।
ভক্তদের চোখে তিনি ফুটবলের ‘ঈশ্বর’। ফুটবলবিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে সেরা ফুটবল প্রতিভা বলে। রেকর্ড এবং পুরস্কারের উর্ধ্বে নিয়ে এসেছেন নিজেকে। পাঁচবার ব্যালন ডি’অর, গোল্ডেল বুট, গোল্ডন বলসহ বিশ্ব ফুটবলের প্রায় সমস্ত সম্মান তার ওয়াড্রোবে শোভা পায়। কিন্তু ২০০৬ থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে চারবার বিশ্বকাপ মঞ্চে উপস্থিত হয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মেসিকে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে হেরে বিশ্বকাপ থেক বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গেই মেসির বিশ্বকাপ স্পর্শ করার স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটেছে আরও একবার।
মেসি এবং রোনালদো দু’জনেই যদিও অবসর ঘোষণা করেননি। কিন্তু এই দুই কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড ৩০ বছর পার করেছেন। তাই ২০২০ কাতার বিশ্বকাপে এই দুই ফুটবল জাদুকরের খেলা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যদি সিআর সেভেন কিংবা এলএম টেন আর বিশ্বকাপের আসরে না-নামেন তাহলে পাকাপাকিভাবে এই তালিকায় নাম লেখাবেন এই দুই কিংবদন্তি।