বিদেশের খবর: গ্রেপ্তার আতংকের মাঝেই পাকিস্তান এসে পৌঁছেছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাহোর বিমানবন্দরে নামেন তারা। এর কিছুক্ষণ পর বিমানবন্দরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বাবা ও মেয়ে দু’জনেরই পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে করে রাওয়ালপিণ্ডির আদিয়ালা জেলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদেরকে। ওদিকে তাদের গ্রেপ্তারের খবরে লাহোরে ব্যাপক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। লাহোর জুড়ে বেশ বড়সড় বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে তাঁর দল পিএমএল-এর সমর্থকেরা। তবে এখনো কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
দুর্নীতির দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
আদালতের রায় ঘোষণার সময় নওয়াজ ও মরিয়ম লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। আজ শুক্রবার লন্ডন থেকে আবুধাবি হয়ে দেশে ফিরলেন তাঁরা। তাঁদের আগমন উপলক্ষে নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) লাহোরে ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন করে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
আদালত নওয়াজ-মরিয়মের সঙ্গে ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। সফদার হলেন মরিয়মের স্বামী। পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট ওই রায় দেন। কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি নওয়াজকে ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ও মরিয়মকে ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন সফদার গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।
লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ।
এর আগে ২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলে-মেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে।
অভিযোগ আছে, এই কম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেন। আদালত তাঁকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।