রাজনীতির খবর: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সময় জনসমর্থনে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ।
দুইশর বেশি দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিরূপণে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা গত কয়েক মাস ধরে অনশন, মানববন্ধনের মত যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন, তাতে চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
শুক্রবার প্রকাশিত বিএমআই রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাগারে যাওয়ার পর দলটির শক্তি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
ফলে ‘দুর্বল নেতৃত্বের’ বিএনপি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে না বলেই এ গবেষণা সংস্থার বিশ্লেষকদের ধারণা।
“ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে এবং দেশে বহু নেতা গ্রেপ্তার থাকায় বিএনপির নেতৃত্বে ‘শক্তিশালী’ নেতার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অবস্থা এর উল্টো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, কয়েক মেয়াদে তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।”
আর গত মে ও জুন মাসে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বড় জয়ের মধ্যেও বিএনপির সমর্থন কমার আভাস দেখতে পাচ্ছে বিএমআই রিসার্চ। তাদের স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার একশর ভেতরে ৫৮.১। তবে নির্বাচন ঘিরে আগের মত সহিংসতার আশঙ্কা বিএমআই রিসার্চ উড়িয়ে দিচ্ছে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট করার দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ইংগিত দিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি বরাবরই নাকচ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
“ফলে ২০১৪ সালের মত এবারও বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে-পরে তাদের সহিংস আন্দোলনের সম্ভবনাও আমরা নাকচ করতে পারছি না।”
বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ওই নির্বাচনে জয় পেয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালে শতাধিক মানুষের প্রাণ যায়। ওই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গ্রেপ্তার হয় সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মী।
বিএমআই রিসার্চ বলছে, রাজনৈতিক বাস্তবতার পাশাপাশি ভোটের বছরের বাজেটে গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার ফলও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পাবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ভর্তুকি, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ আগের বছরের তুলতায় যথাক্রমে ২৭.৯, ২৪.৮ ও ৮.৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। এটা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ভূমিকা রাখবে বলে গবেষণা সংস্থাটি মনে করছে।