জাতীয়

জামদানি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট: আগ্রাসী ভারত, কী করবে বাংলাদেশ?

By Daily Satkhira

November 29, 2016

ন্যাশনাল ডেস্ক: বাংলাদেশের জামদানি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে ভারত। ভৌগলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল আইনের (জিআই) মাধ্যমে নিজেদের দাবি করে ভারত এসব পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জামদানিকে অন্ধ্র প্রদেশের ‘উপ্পাদা’ জামদানি হিসেবে, নকশিকাঁথাকে পশ্চিম বাংলার পণ্য হিসেবে এবং বাংলাদেশের চিরচেনা ফজলি আমকে পশ্চিম বাংলার মালদা জেলার অধীনে প্যাটেন্ট করিয়েছে। ভারত জিআইয়ের অধীনে রেজিস্ট্রার খুলেছে। যার মাধ্যমে পণ্যগুলো প্যাটেন্ট করিয়েছে। এছাড়া ভারত চেন্নাইয়ের অধীনে আরও ১৫৮টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে প্যাটেন্ট করানোর জন্য। এ অবস্থায়  প্রশ্ন উঠেছেÑ প্যাটেন্ট আগ্রাসী ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজস্ব পণ্যের প্যাটেন্ট রক্ষায় কী করবে বাংলাদেশ? এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘পণ্যের প্যাটেন্ট রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জিআই আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জিআই পণ্যের নিবন্ধন দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রথম ভৌগলিক নির্দেশক জিআই পণ্য হিসেবে জামদানিকে নিবন্ধন দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে জামদানি। সম্প্রতি বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখারের হাতে এ নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিসিকের আবেদনের ফলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) জামদানিকে এ নিবন্ধন দেয়। এর পরপরই ইলিশ নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। জামদানির পর বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সম্প্রতি মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ডিপিডিটিতে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে শিল্প মন্ত্রণালয়ে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ আবেদনপত্র জমা দেন। এটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আশা করা হচ্ছে, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিগগিরই ইলিশও জিআই নিবন্ধন সনদ লাভ করবে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত জিআই পণ্যগুলো দ্রুত শনাক্ত করে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সহায়তায় ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩’ এবং ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়নের পরই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ গৌরবময় অর্জনকে সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার জিআই পণ্য হিসেবে জামদানিকে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে  ডব্লিউআইপিও’রর সহায়তায় এ’দুটি  আইন  প্রণয়ন করা হয়। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ জামদানির মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়টি পণ্য সুপরিচিত, জামদানি এর অন্যতম। এটি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পণ্য মসলিনের পঞ্চম সংস্করণ। একে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের মাধ্যমে ঐতিহ্য সুরক্ষার পথে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেল। পর্যায়ক্রমে জাতীয় মাছ ইলিশসহ অন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে। এর ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি ঐতিহ্যগত সম্পদ সুরক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, কোনও পণ্য জিআই হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে ওই পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশের যে সীমানা বা ভূখ-ে উদ্ভূত বা তৈরি হয়েছে, তার প্রমাণ হাজির করতে হয়। পাশাপাশি ওই পণ্য যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত, তারও ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দাখিল করতে হয়। সরকার প্রমাণ করেছে, ঐতিহ্যগতভাবেই জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জামদানির কয়েক শ বছরের পুরনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। জামদানি যে শুধু বাংলাদেশেরই নিজস্ব পণ্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফল তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে ইলিশেরও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইলিশ রয়েছে। ইলিশ ভারতেও রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের জিআই স্বত্ব শুধুই বাংলাদেশের। তবে ভারত যে ইলিশের জিআই স্বত্ব নিয়েছে, তা ভারতের সীমানার ভেতরে গঙ্গার ইলিশের। জানা গেছে, ভারত জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর (জিআই) নামের আইনের অধীনে রেজিস্ট্রার খুলেছে। যার মাধ্যমে জামদানি, নকশিকাঁথা, ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সব সদস্য দেশকে ট্রেড রিলেটেড ইনটেলিকচ্যুয়াল প্রোপারটি রাইট’স (ট্রিপস) চুক্তির আওতায় এটি খুলতে হয়। চুক্তির ২২, ২৩ ও ২৪ ধারায় লেখা আছে, প্রতিটি দেশ জিআই অ্যাক্ট ১৯৯৯-এর আওতায় তার দেশের জনপ্রিয়, এক্সট্রা অর্ডিনারি ও স্বতন্ত্র পণ্যগুলোকে প্যাটেন্ট ও সংরক্ষণ করতে পারবে। এই চুক্তির আওতায় ভারত এই ৬৬টি পণ্য প্যাটেন্ট করিয়েছে। তারা চেন্নাইয়ের অধীনে আরও ১৫৮ টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে প্যাটেন্ট করানোর জন্য। মেধাস্বত্ব মালিকানা হারানোর ফলে ভবিষ্যতে ট্রিপস চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের জামদানি ও নকশিকাঁথার উৎপাদন ও বিপণন। এর ফলে বাংলাদেশের জীববৈচিত্য ও সাংস্কৃতিক পণ্য পেটেন্ট আগ্রাসনের শিকার হবে। গত দুই দশক ধরেই পশ্চিমা বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেমন মনসেন্টো, ইউনিলিভার, ডুপন্ট তৃতীয় বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জ্ঞান, প্রাণ বৈচিত্য তথা জেনেটিক সম্পদকে অবৈধভাবে পেটেন্ট করে নিয়েছে। এসবের ওপর তাদের নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ ধরনের পেটেন্ট আগ্রাসনের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির ২৭.৩ (খ) ধারা। যেখানে দুনিয়ার সব প্রাণ ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর পেটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে। ব্যাবসায়িকভাবে অবাধ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এই মেধাস্বত্ব অধিকার। নিপুণ কারুকার্য ও বাহারি নকশার ফলে বাংলাদেশের জামদানি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সমাদৃত হচ্ছে। চাহিদার আলোকে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মে এসেছে গুণগত পরিবর্তন। ফলে এ শিল্পে পণ্য বৈচিত্য করণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মানিব্যাগ, রুমাল ও হাত ব্যাগে জামদানির নকশা ব্যবহার হচ্ছে। মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, টেবিল ক্লথ ও অন্যান্য পণ্য তৈরিতেও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি জামদানি শাড়ি ও বস্ত্র রফতানি হচ্ছে। জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত। দেশে প্রতি বছর ২ লাখ পিসেরও বেশি জামদানি শাড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত ইন্টারগভর্নমেন্ট কমিটির অষ্টম সম্মেলনে ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে অংশ গ্রহণ করে। প্রদর্শিত পণ্যগুলোর মধ্য থেকে ইউনেস্কোর জুরিবোর্ড ৭টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ এর তালিকাভুক্ত করে। যার মধ্যে জামদানি অন্যতম। শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ধীরে ধীরে জামদানি শিল্পখাত হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে জামদানি শিল্প একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কারুশিল্পীদের মাঝে নকশা বিতরণ, প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা, বিপণনের অবকাঠামো তেরি ইত্যাদির মাধ্যমে বিসিক এ শিল্পের  ক্রমোন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার জিআই পণ্যসহ মেধাসম্পদের মালিকানা সুরক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জিআই পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধনের লক্ষ্যে ডব্লিআইপিও’র সহায়তায় ইতোমধ্যে  জিআই আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জিআই পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে।’ জামদানি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট আগ্রাসী ভারত, কী করবে বাংলাদেশ? ন্যাশনাল ডেস্ক: বাংলাদেশের জামদানি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে ভারত। ভৌগলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল আইনের (জিআই) মাধ্যমে নিজেদের দাবি করে ভারত এসব পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জামদানিকে অন্ধ্র প্রদেশের ‘উপ্পাদা’ জামদানি হিসেবে, নকশিকাঁথাকে পশ্চিম বাংলার পণ্য হিসেবে এবং বাংলাদেশের চিরচেনা ফজলি আমকে পশ্চিম বাংলার মালদা জেলার অধীনে প্যাটেন্ট করিয়েছে। ভারত জিআইয়ের অধীনে রেজিস্ট্রার খুলেছে। যার মাধ্যমে পণ্যগুলো প্যাটেন্ট করিয়েছে। এছাড়া ভারত চেন্নাইয়ের অধীনে আরও ১৫৮টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে প্যাটেন্ট করানোর জন্য। এ অবস্থায়  প্রশ্ন উঠেছেÑ প্যাটেন্ট আগ্রাসী ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজস্ব পণ্যের প্যাটেন্ট রক্ষায় কী করবে বাংলাদেশ? এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘পণ্যের প্যাটেন্ট রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জিআই আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জিআই পণ্যের নিবন্ধন দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রথম ভৌগলিক নির্দেশক জিআই পণ্য হিসেবে জামদানিকে নিবন্ধন দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে জামদানি। সম্প্রতি বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখারের হাতে এ নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিসিকের আবেদনের ফলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) জামদানিকে এ নিবন্ধন দেয়। এর পরপরই ইলিশ নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। জামদানির পর বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সম্প্রতি মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ডিপিডিটিতে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে শিল্প মন্ত্রণালয়ে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ আবেদনপত্র জমা দেন। এটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আশা করা হচ্ছে, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিগগিরই ইলিশও জিআই নিবন্ধন সনদ লাভ করবে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত জিআই পণ্যগুলো দ্রুত শনাক্ত করে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সহায়তায় ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩’ এবং ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়নের পরই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ গৌরবময় অর্জনকে সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার জিআই পণ্য হিসেবে জামদানিকে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে  ডব্লিউআইপিও’রর সহায়তায় এ’দুটি  আইন  প্রণয়ন করা হয়। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ জামদানির মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়টি পণ্য সুপরিচিত, জামদানি এর অন্যতম। এটি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পণ্য মসলিনের পঞ্চম সংস্করণ। একে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের মাধ্যমে ঐতিহ্য সুরক্ষার পথে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেল। পর্যায়ক্রমে জাতীয় মাছ ইলিশসহ অন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে। এর ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি ঐতিহ্যগত সম্পদ সুরক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, কোনও পণ্য জিআই হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে ওই পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশের যে সীমানা বা ভূখ-ে উদ্ভূত বা তৈরি হয়েছে, তার প্রমাণ হাজির করতে হয়। পাশাপাশি ওই পণ্য যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত, তারও ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দাখিল করতে হয়। সরকার প্রমাণ করেছে, ঐতিহ্যগতভাবেই জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জামদানির কয়েক শ বছরের পুরনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। জামদানি যে শুধু বাংলাদেশেরই নিজস্ব পণ্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফল তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে ইলিশেরও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইলিশ রয়েছে। ইলিশ ভারতেও রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের জিআই স্বত্ব শুধুই বাংলাদেশের। তবে ভারত যে ইলিশের জিআই স্বত্ব নিয়েছে, তা ভারতের সীমানার ভেতরে গঙ্গার ইলিশের। জানা গেছে, ভারত জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর (জিআই) নামের আইনের অধীনে রেজিস্ট্রার খুলেছে। যার মাধ্যমে জামদানি, নকশিকাঁথা, ফজলি আমসহ ৬৬টি পণ্যের প্যাটেন্ট করে নিয়েছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সব সদস্য দেশকে ট্রেড রিলেটেড ইনটেলিকচ্যুয়াল প্রোপারটি রাইট’স (ট্রিপস) চুক্তির আওতায় এটি খুলতে হয়। চুক্তির ২২, ২৩ ও ২৪ ধারায় লেখা আছে, প্রতিটি দেশ জিআই অ্যাক্ট ১৯৯৯-এর আওতায় তার দেশের জনপ্রিয়, এক্সট্রা অর্ডিনারি ও স্বতন্ত্র পণ্যগুলোকে প্যাটেন্ট ও সংরক্ষণ করতে পারবে। এই চুক্তির আওতায় ভারত এই ৬৬টি পণ্য প্যাটেন্ট করিয়েছে। তারা চেন্নাইয়ের অধীনে আরও ১৫৮ টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে প্যাটেন্ট করানোর জন্য। মেধাস্বত্ব মালিকানা হারানোর ফলে ভবিষ্যতে ট্রিপস চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের জামদানি ও নকশিকাঁথার উৎপাদন ও বিপণন। এর ফলে বাংলাদেশের জীববৈচিত্য ও সাংস্কৃতিক পণ্য পেটেন্ট আগ্রাসনের শিকার হবে। গত দুই দশক ধরেই পশ্চিমা বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেমন মনসেন্টো, ইউনিলিভার, ডুপন্ট তৃতীয় বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জ্ঞান, প্রাণ বৈচিত্য তথা জেনেটিক সম্পদকে অবৈধভাবে পেটেন্ট করে নিয়েছে। এসবের ওপর তাদের নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ ধরনের পেটেন্ট আগ্রাসনের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির ২৭.৩ (খ) ধারা। যেখানে দুনিয়ার সব প্রাণ ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর পেটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে। ব্যাবসায়িকভাবে অবাধ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এই মেধাস্বত্ব অধিকার। নিপুণ কারুকার্য ও বাহারি নকশার ফলে বাংলাদেশের জামদানি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সমাদৃত হচ্ছে। চাহিদার আলোকে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মে এসেছে গুণগত পরিবর্তন। ফলে এ শিল্পে পণ্য বৈচিত্য করণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মানিব্যাগ, রুমাল ও হাত ব্যাগে জামদানির নকশা ব্যবহার হচ্ছে। মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, টেবিল ক্লথ ও অন্যান্য পণ্য তৈরিতেও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি জামদানি শাড়ি ও বস্ত্র রফতানি হচ্ছে। জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত। দেশে প্রতি বছর ২ লাখ পিসেরও বেশি জামদানি শাড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত ইন্টারগভর্নমেন্ট কমিটির অষ্টম সম্মেলনে ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে অংশ গ্রহণ করে। প্রদর্শিত পণ্যগুলোর মধ্য থেকে ইউনেস্কোর জুরিবোর্ড ৭টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ এর তালিকাভুক্ত করে। যার মধ্যে জামদানি অন্যতম। শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ধীরে ধীরে জামদানি শিল্পখাত হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে জামদানি শিল্প একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কারুশিল্পীদের মাঝে নকশা বিতরণ, প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা, বিপণনের অবকাঠামো তেরি ইত্যাদির মাধ্যমে বিসিক এ শিল্পের  ক্রমোন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার জিআই পণ্যসহ মেধাসম্পদের মালিকানা সুরক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জিআই পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধনের লক্ষ্যে ডব্লিআইপিও’র সহায়তায় ইতোমধ্যে  জিআই আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জিআই পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে।’