আন্তর্জাতিক

শিক্ষা-চিকিৎসায় কিউবাকে বিশ্বসেরা করেছেন কাস্ত্রো

By Daily Satkhira

November 29, 2016

অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী মার্কিনবিরোধী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই পরিচিত লাতিন আমেরিকার দেশ কিউবা। ১৯৫৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ-বৈরিতার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলেছে প্রয়াত বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ। নানা কারণেই সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার রাজনীতিক ও অভিজ্ঞরা গিয়েছেন কাস্ত্রোর দেশে। অনেকের মতো বাংলাদেশ থেকেও ওই দেশ সফর করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ মেনন ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তারা বলেন, ফিদেলের শাসনামলেই কিউবা বিশ্বে শিক্ষা ও চিকিৎসায় অনন্য অবস্থান অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক শক্তিশালী দেশকে পাশে রেখে কেবল জনগণের ওপর ভরসা করে দেশ পরিচালনা করাই ছিল কাস্ত্রোর সফলতার মূল উপাদান।

জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমি যখন কিউবা যাই, তখন সেখানে মার্কিন অবরোধ প্র্যাকটেক্যালি চূড়ান্ত পর্যায়ে। শুধু মার্কিনই নয়, তারা পশ্চিমা মিত্রদের বাধ্য করছিল অবরোধ মেনে নিতে। ফলে ওই সময় তেল, চিনিসহ অন্যান্য দ্রব্য পাওয়া যায় না। আমরা যখন গেলাম, এরইমধ্যে সরকার এসব ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে, সফলতাও পাচ্ছে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, কিভাবে অবরোধের মধ্যেও অর্থনীতিকে সচল রাখতে হয়।’ কিউবা তিনবার সফর করেছেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার যান। আর তৃতীয়বার ২০০০ সালে আমন্ত্রিত আন্তর্জাতিক কিউবা সংহতি সম্মেলনে অংশ নিতে সেখানে যান তিনি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওই সময় অবরোধের মধ্যেও স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপ্তি ঘটেছে। নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে। ওই সময় দেশটির পাড়া-মহল্লায় গেছি, মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে সমাজতন্ত্রের পক্ষে রয়েছে। এত কষ্টের মধ্যেও কোনও অভিযোগ করছে না। শিশু ও বৃদ্ধদের খাবারের যেন অভাব যেন না হয়, সেটা তারা নিশ্চিত করেছে। ফলে, শিশু ও বৃদ্ধদের খাবারের কোনও অভাব ছিল না।’ ২০০৫ সালে কিউবা সফর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। প্রায় এক মাস তিনি সেখানে অবস্থান করেন। দেশে ফিরে তিনি ‘বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা’ নামে একটি গ্রন্থও লেখেন। ২০০৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। ওই সময় ‘অসুস্থ’ থাকায় ফিদেলের সঙ্গে আনু মুহাম্মদের দেখা হয়নি। কিউবা সম্পর্কে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রায় এক মাসের সফরে আমি কিউবার পাড়া-মহল্লা, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানা বিষয় দেখেছি। মানুষের ওপর ভরসা না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে একজন শাসকের পেরে ওঠা সম্ভব না। ফিদেল কাস্ত্রো যেটি দেখিয়েছেন। ’ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার এ বছরের মার্চে প্রকাশিত ‘ওবামার কিউবা সফর: কিউবায় যুক্তরাষ্ট্র, কে কাকে বদলাবে?’ শীর্ষক প্রবন্ধের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানবীয় শক্তির ক্রমাগত আক্রমণ ও চক্রান্তের মুখে কিউবার টিকে থাকাই এক বিস্ময়। কিউবা শুধু টিকেই থাকেনি, পরিবেশসম্মত কৃষিব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বে মডেল হয়েছে। সব নাগরিকের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্ণবাদ, যৌনবাদের গোড়ায় আঘাত করেছে কিউবা। চিকিৎসা-প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় কিউবা এখন বিশ্বের ১ নম্বর দেশ। এই জ্ঞান ও সেবা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে কিউবার প্রায় ৫০ হাজার চিকিৎসক বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। চিকিৎসা-প্রযুক্ত খাতে মহাসম্পদশালী যুক্তরাষ্ট্র থেকেও এগিয়ে কিউবা।’ কাস্ত্রোর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘১৯৯৭ সালে আমি প্রথম বিশ্ব আন্তর্জাতিক কিউবা সংহতি সম্মেলনে আমি গিয়েছিলাম। ওই সময় কাস্ত্রোকে সরাসরি দেখি, তার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলার সুযোগ হয়।’ তিনি জানান, ‘ওই সফরে তার সঙ্গে ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান, ফয়েজ আহমদসহ কয়েকজন কিউবা গিয়েছিলেন।’ শাসক হিসেবে কাস্ত্রোর প্রশংসা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কিউবার মানুষ তো ফিদেল বলতে অজ্ঞান, ফিদেল তাদের ত্রাতা, ফিদেল তাদের নেতা।’ ফিদেলের সমালোচকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যাদের সম্পদ জাতীয়করণ করা হয়েছে, তারাই ফিদেলের সমালোচনা করেন।’