দেশের খবর: দেশের জনগণকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের লাগানো গাছের একটি মরিচ খেলে তাতে ঝাল লাগলেও তৃপ্তি আসে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা, ২০১৮ উপলক্ষে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক, অফিস-আদালত, সরকারি ভবন, পার্ক, নদীতীর, লেক, জেলা মাঠ, খেলার মাঠ, কবরস্থান, পতিত জমি, এমনকি বাড়ির ছাদ বা ব্যালকনি- সব জায়গায়ই কিন্তু গাছ লাগানো যায়। যদি ইচ্ছা করেন আপনারাও পারেন। এভাবে আপনারা একটি সবুজ বেষ্টনির সৃষ্টি করতে পারেন।’
‘বাড়ির ব্যালকনিতেও যদি আপনি একটা গাছ লাগান, মনে করেন একটা মরিচ গাছ লাগালেন, নিজের গাছের একটা মরিচ ছিঁড়ে যদি খাবার টেবিলে খান, খুব ঝাল লাগলেও তাতে একটা তৃপ্তি আসবে।’
ঠিক একইভাবে যেখানে জায়গা পাওয়া যায়, বা নিজের কোনো পরিত্যক্ত জায়গা থাকলে সেটি পতিত ফেলে না রেখে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, পরে সেই গাছ বিক্রি করেও ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন সম্ভব। একইসঙ্গে পরিবেশও রক্ষা হবে।
এজন্য দেশের প্রত্যেক জনগণকে একটি বনজ, একটি ফলজ ও একটি ভেষজ গাছ, অর্থাৎ অন্তত তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। বলেন, প্রত্যেকে যদি অন্তত তিনটি করে গাছ লাগান তবে প্রত্যেকেই সুফল পাবেন, একই সঙ্গে দেশ উপকৃত হবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা ও বনায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্লাস্টিক দূষণ ও পাট এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Beat plastic pollution. If you can’t beat it, refuse it.’ অর্থাৎ ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি। যদি না পারি, তবে তা বর্জন করি।’ এটি অত্যন্ত যুগোপযোগী প্রতিবাদ্য বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান সরকার পরিবেশ সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্লাস্টিক একটি অপচনশীল দ্রব্য। প্লাস্টিকের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ একে অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। এই প্লাস্টিক এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক ফেলার ফলে সাগর-মহাসাগরে গিয়ে এসব জমা হচ্ছে। এ কারণে অনেক জায়গায় এখন জাহাজ চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
‘আমরা এখনো অতটা খারাপ অবস্থায় যাইনি। তবে বিশ্বব্যাপীই এটা এখন বিরাট একটা সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে দেশে পলিথিনসহ প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল বা নবায়নযোগ্য ব্যবহারের ব্যবস্থা চালু করতে এবং ধীরে ধীরে এসব ব্যবহার বন্ধ করতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি, আমাদের বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষও প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকে। তাই রিসাইকেলের দিকে আমাদের বেশি ব্যবস্থা নেয়া উচিত,’ বলেন তিনি।
এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশ পাট উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। গবেষণার মাধ্যমে পাটের একটি পলিমারও বর্তমানে তৈরি হয়েছে। এটি দিয়ে বানানো ‘সোনালি ব্যাগ’ পচনশীল এবং পরিবেশবান্ধব। এটি একসময় পচে যাবে এবং পরিবেশ দূষণ করবে না।
দৈন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ‘আমি যে ব্যাগটি ব্যবহার করছি সেটাও কিন্তু পাটেরই ব্যাগ,’ বলেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে একটি ছাতিম গাছের চারা রোপন করেন। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ চারা রোপণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এরপর শেরেবাংলা নগরে বৃক্ষমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।