বিদেশের খবর: ফিলিস্তিনি জাতিমুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন ও গাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির সম্মতি লঙ্ঘন করে সেখানে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার ভোরে হামাসের একটি পর্যবেক্ষণ পোস্ট লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ট্যাংক হামলা চালায়। তবে তাতে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
গত শুক্রবার গাজা সীমান্তে এক ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর পর গাজায় বিমান হামলা জোরালো করে ইসরায়েল। দফায় দফায় বিমান হামলায় নিহত হয় চার ফিলিস্তিনি। হামাসও পাল্টা হামলা অব্যাহত রাখে। শনিবার হামাসের মুখপাত্র ফওজি বারহুম জানান, মিসর ও জাতিসংঘের কূটনীতিকদের মধ্যস্ততায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গ্রুপটি শান্ত পরিস্থিতিতে ফিরতে সম্মত হয়েছে। তখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই সম্মতির খবর নিশ্চিত না করলেও এক সেনা মুখপাত্র জানান, শুক্রবার রাত থেকে নতুন করে আর হামলা চালায়নি তারা।
তবে শনিবার সকালে ইসরায়েলি ট্যাংক হামাসের পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় সীমান্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের জবাবে ওই হামলা চালানো হয়।
তবে এই হামলার পর দিনভর ইসরায়েল আর বড় ধরনের কোনও হামলা চালায়নি। হামাসের তরফ থেকেও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কোনও মর্টার ছোঁড়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সব ধরনের সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতির সম্মতি ছিল। তবে তিনি বলেন, জ্বালানিসহ বেলুন আর ঘুড়ি ব্যবহার করে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে না পাঠানোর বিষয়ে কোনও সম্মতি হয়নি।
বিগত কয়েক মাস ধরে গাজা সীমান্ত এলাকা থেকে জ্বালানিসহ বেলুন আর ঘুড়ি ইসরায়েলের আকাশে পাঠিয়ে আসছে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামীরা। এসব বেলুন আর ঘুড়ির কারণে হাজার হাজার ডলারের সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদেরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শনিবারের অস্ত্রবিরতির সম্মতি নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছে। তবে এক সেনা মুখপাত্র বলেন, আমরা যা বলতে পারি তা হলো শুক্রবার মধ্যরাতে কয়েক দফা বিমান হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বা কোনও ঘটনা ঘটেনি।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে তিনবার যুদ্ধ হয়েছে। গাজা উপত্যকার ওপর আরোপিত ইসরায়েলি অবরোধ নতুন করে জোরালো করায় নতুন আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হাফ লোভাট এএফপিকে বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতির সম্মতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কোনও পক্ষই যুদ্ধ চায় না, যদিও এটা সাময়িক বিরতি। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সংহত এবং ইসরায়েলি অবরোধ শিথিল করাসহ আরও চূড়ান্ত কোনও চুক্তিতে পরিণত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘন ঘন উত্তেজনা বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করতে থাকবো।’
১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ওই ঘটনার স্মরণে এই বছর ৩০ মার্চ থেকে প্রতি শুক্রবার অধিকৃত গাজা সীমান্তে ভূমি দিবস পালনে ফিলিস্তিনিরা ‘গ্রেট রিটার্ন অব মার্চ’ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। আর প্রতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনিদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েল। মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা অন্তত ১৪০ জন।