রাজনীতির খবর: এবার নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) কোনও নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পায়নি। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৭৬টি দলের মধ্যে দু’টি রাজনৈতিক দল প্রাথমিক বাছাইয়ে যোগ্য হলেও চূড়ান্ত বিচারে অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে। দল দুটির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম তদন্তে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ না হওয়ায়, তাদের নিবন্ধনের আবেদন নাকচ করা হয়। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদও দল দুটির নিবন্ধন আবেদন নাকচ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ইসিতে আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেস ও গণআজাদী লীগের আবেদন আমলে নিয়ে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নেয় ইসি। ইসি তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে দল দুটির মাঠ পর্যায়ের অফিস ও কমিটিসহ যাবতীয় কার্যক্রম তদন্ত করে। নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে যে সংখ্যক অফিস থাকার কথা, তদন্তকালে দলটির সেই সংখ্যক অফিস খুঁজে পাননি ইসির কর্মকর্তারা। মাঠ প্রশাসন থেকে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন দল দুটির নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত অক্টোবরে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে সাড়া দিয়ে নিবন্ধন পেতে ৭৬টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে প্রাথমিক তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রথম দফায় ১৯টি আবেদন বাতিল করা হয়। এরপর বাকি দলগুলোর কাছে আরও তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় ইসি। এতে সাড়া না দেওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আরও আটটি দলের আবেদন নাকচ করে ইসি। পরে ৪৯টি দলের তথ্য যাচাই করে মাত্র দুটি দল প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এরপর দল দুটির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম তদন্ত করে ইসি। কিন্তু আবেদনপত্রে তাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল না পেয়ে দল দুটির নিবন্ধন প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আবেদিত ৭৬টি দলের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যোগ্য মনে করে, দুটি দলের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম তদন্ত করিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত পূরণ করার কথা রয়েছে, দল দুটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিষয়টি আমরা কমিশনে তুলেছিলাম। কমিশন দল দুটিকে নিবন্ধন না দিতে নির্দেশনা দিয়েছে।’ ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর পর ৩৮টি দল নিবন্ধিত হয়। এরপর নবম সংসদে দুটি এবং দশম সংসদে দুটি দল নিবন্ধন পায়। এছাড়া, শর্ত পূরণ না হওয়ায় একটি দলের নিবন্ধন বাতিল ও আদালতের আদেশে আরেকটি দলের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। এছাড়া, বর্তমান কমিশন সম্প্রতি কাজী ফারুকের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা নিজস্ব প্রতীক নিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারে।
নিবন্ধনের শর্ত: নিবন্ধন পেতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮ এর শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো হলো— ১. আগ্রহী দলটিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনও জাতীয় নির্বাচনে যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন। ২. যে কোনও একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের অংশ নেওয়া আসনগুলোতে যদি মোট প্রদত্ত ভোটের পাঁচ শতাংশ পায়। এবং ৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।