জাতীয়

৪০ সেকেন্ডেই আ’লীগ নেতাকে অপহরণ! (ভিডিও)

By Daily Satkhira

July 27, 2018

দেশের খবর: মাত্র ১৩ সেকেন্ডের কথোপকথন ও করমর্দন, এরপর ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে রাজধানীর লালমাটিয়ার একটি সড়ক থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকারকে।

তাকে অপহরণের জন্য অপহরণকারীরা নিয়ে এসেছিল বিলাসবহুল একটি গাড়ি। দিনদুপুরে পথচারীদের সামনে এমন অপহরণের সময় কেউ এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। কারণ, অপহরণকারীদের সঙ্গে ছিল অস্ত্র।

স্থানীয় থানা পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৭/৮ জন অপহরণকারীকে চিহ্নিত করেছে। তবে ফুটেজে চেহারা অস্পষ্ট থাকায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।

লালমাটিয়ার বি ব্লকের মিনার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার পর প্রকাশ্যে একটি গাড়িতে করে তুলে নেয়া হয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতাকে। পারভেজ তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (তিতাস ও হোমনা) আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বেলা পৌনে ২টার দিকে এক ব্যক্তি তার বাসার সামনে কুশল বিনিময়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। পারভেজ মোবাইলের দিকে তাকাতে তাকাতে হাত মেলান। এরপর দুজনের মধ্যে একটু কথা হয়। এর মধ্যেই লম্বা চুলওয়ালা অপর এক ব্যক্তি পারভেজের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে ১৩ সেকেন্ড কথা হয়। এরপরই দুজন মিলে পারভেজকে টেনেহিচড়ে নিয়ে যায়। ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই তাকে একটি কালো বিলাসবহুল গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। এরপর দ্রুত তারা ওই এলাকা থেকে চলে যায়।

ঘটনার পরপরই অপহরণের খবর পায় পারভেজের পরিবার। তারা ছুটে যায় মোহাম্মদপুর থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। পরিবারের অভিযোগ নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত।

একজন ভাইস চেয়ারম্যানের নামও উল্লেখ করেছেন তারা। তবে পুলিশ সবকিছু মাথায় রেখেই তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পারভেজ হোসেনের সরকারের স্ত্রী একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আমরা তার আগেই তদন্ত শুরু করেছি। ওই এলাকার সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সিসি ক্যামেরার দৃশ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন গাড়িও শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই তদন্ত করছি।’

তবে পারভেজের বিরুদ্ধে থানায় কোনও মামলা নেই। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি বলেও নিশ্চিত করেন ওসি জামাল উদ্দিন মীর। অন্য কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করছে কিনা তা ওসির জানা নেই।

পারভেজ হোসেনের খালাতো ভাই ফাহাদ মোহাম্মদ জানান, জুমার নামাজ শেষে তিনি লালমাটিয়া মসজিদ থেকে বের হয়ে বাসার দিকে আসছিলেন। এ সময় একজনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এরপরই একটি কালো রঙের জিপ গাড়ি আসে এবং দুজন মিলে জোরপূর্বক তাকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি দ্রুত মোহাম্মদপুর থানায় জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। সেখানে দেখা গেছে, একটি কালো রঙের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪২৫৭৭) বাসার সামনে এসে থামে এবং দুজন লোক জোর করে পারভেজকে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।’

সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন র‌্যাব-২ এর সিওসহ একদল সদস্য। গোয়েন্দা পুলিশের লোকজনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।

পারভেজ হোসেন সরকারের স্ত্রী তাহমিনা আফরোজ, দুই ছেলে আব্দুল্লাহ (৭) ও আহরারকে (২) সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা নিক্সন চৌধুরী, জেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে এই অপহরণের জন্য কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার ও তার লোকজনকে দায়ী করেছে পারভেজের স্ত্রী তাহমিনা আফরোজ মৌসুমী।

তিনি বলেছেন, ‘কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার ও তার লোকজনই আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। পারভেজের আর কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। সোহেলের ভয়ে তিনি গত ১ বছর ২ মাস ধরে তিতাস এলাকায় যেতেন না।’

‘এর আগে সোহেল শিকদারসহ তার লোকজন পারভেজের ওপর হামলা চালিয়েছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে সোহেল শিকদারসহ তার লোকজন পারভেজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ও হামলা করে। কিন্তু গুলি গাড়িতে লাগায় বেঁচে যান পারভেজ। তখন থেকে তিনি আর ওই দিকে যাননি। ঢাকাতেই রেস্তোরাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমরা সোহেলদেরই সন্দেহ করছি। তাদের নামেই থানায় অভিযোগ করেছি।’

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন