সাতক্ষীরা

আগরদাঁড়িতে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে স্থানীয় শিশু ফোরাম

By Daily Satkhira

July 29, 2018

এম. এ হোসাইন : স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার আইন ও ম্যানুয়ালে জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও প্রায় ৪৫% প্রতিনিধি অর্থাৎ শিশুদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে শিশুদের বিশেষত দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের অধিকার ও চাহিদা দৃশ্যমান হয় না। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধিবৃন্দ শিশুর অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে স্ব-উদ্যোগে শিশুদের অংশগ্রহণের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ‘ডায়ালগ’ অধিবেশনের মাধ্যমে শিশুদের মতামত প্রদানের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন ও বাস্তবায়ন করছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১০নং আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ শিশুদের মতামত ও চাহিদার প্রেক্ষিতে স্ব-উদ্যোগে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পৃক্ত করে ৫০জন শিশুকে নিয়ে ফোরাম কমিটি গঠন করেছে। যারা জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নিয়মিত মাসিক সভার মাধ্যমে শিশু কেন্দ্রিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অগ্রনী ভুমিকা রাখে। এছাড়াও এই শিশু ফোরামের সদস্যরা স্থানীয় যুবকদের সম্পৃক্ত করে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিতে শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ইউনিয়ন/পৌরসভাতে স্থাপিত অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ জমা দেয় এবং তা জনপ্রতিনিধিদের নিকট উত্থাপন করেন। শিশুবান্ধব ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতার বিষয়টি জনপ্রতিনিধিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রত্যেক মাসের নিদিষ্ট দিনে শিশুদের সাথে নিয়মিত ডায়ালগ-এর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সময় বরাদ্দ করেন। শিশুদের সরাসরি উত্থাপিত অভিযোগ এবং মতামত/চাহিদার প্রেক্ষিতে জনপ্রতিনিধিগণ প্রত্যাশিত সেবা প্রদান সংক্রান্ত জবাবদিহিমূলক উত্তর ও কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেন। এর মাধ্যমে ইউনিয়নে ও পৌরসভাতে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির শিশুরা সামাজিক সুরক্ষাসহ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেবাপ্রদান পাচ্ছে। মূলত ডায়ালগ সেশনের মাধ্যমে শিশুদের শিশু কেন্দ্রিক সমস্যা/অভিযোগ উত্থাপনের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্র তৈরির সুযোগ দেয়া ও স্থানীয় সুশাসন নিশ্চিতকরণে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এই এর ফলে শিশুরা ক্ষমতায়িত হয় এবং আগামী দিনের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেদের তৈরি করছে। সর্বোপরি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি ও শিশুবান্ধব স্থানীয় সুশাসন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের সাথে কমিউনিটির শিশুদের মাধ্যমে সরাসরি ডায়ালগ সেশনের আয়োজন, শিশু সংশ্লিষ্ট গৃহীত সিদ্ধান্ত ইউনিয়নের কার্য-বিবরণীতে (রেজ্যুলেশন) অন্তর্ভূক্ত করা, অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা, শিশুদের (লিখিত, মোবাইল, সরাসরি) অভিযোগ ও মতামত গ্রহণ করে এর প্রেক্ষিতে সাড়া প্রদান করা হয়। যা সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে রেজিস্টার বইতে লিপিবদ্ধ ও ফলোআপ করা হয়। এছাড়া শিশুদের সাথে যেকোন সময় সরাসরি আলোচনার সুযোগ থাকছেই। এর ফলে শিশুদের মতামত ও চাহিদার প্রেক্ষিতে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাট, টয়লেট সংস্কার, স্কুলের বেঞ্চ মেরামত, ফ্যান প্রদান, ইটের সোলিং মেরামত, ভাঙা পুল মেরামত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ঝটিকা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের সচিব মো. আবুল কালাম বলেন, সকলে মিলে ইউনিয়নে শিশুবান্ধব সুশাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। তিনি সহ সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা শিশু ফোরামের সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন এবং শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেন। আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজনুর রহমান মালী বলেন, আগরদাড়ী মহিলা মাদ্রাসা, আবাদেরহাট গালস স্কুল এবং হলদার বাড়ি পুকুরের পাশে যৌন হয়রানি বন্ধ করা, আগরদাড়ি মহিলা মাদ্রসা ও বকচরা আমমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসাতে টয়লেট সংস্কার করা, আগরদাড়ি মাঝের পাড়া মোস্তাফা আমিনের বাড়ির পিছনের পুল ও ধলবাড়িয়া পুল সংস্কার, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, ইন্দিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পরানদহা মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় পানির কল মেরামত, ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলাধুলার উপকরণ বিতরণ, দরিদ্র ও অসহায় শিশুর পরিবারকে ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড দেওয়া , প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাতার কার্ড দেয়া, স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিক চলাকালিন সময়ে ভিজিট করা, খেলার মাঠ শিশুদের ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা, আগরদাড়ি পশ্চিমপাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাথরুমের দরজা ও ব্লাক বোর্ড স্থাপন, বকচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা সংস্কারসহ নানাবিধ কাজ শিশুদের মতামত এর প্রেক্ষিতে ইতি মধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। শিশুরা ওয়ার্ড সভা, প্রি-বাজেট সভা ও উন্মুক্ত বাজেট সভায় অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের কল্যাণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো ৪৪ টি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি যা চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন করবো। এক্ষেত্রে সেভ দ্য চিলড্রেন এর সহযোগিতায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে।

অভিযোগ গ্রহণ ও সাড়া প্রদান কমিটির সভাপতি মোছা. রেহেনা খাতুন বলেন, শিশুদের সাথে নিয়মিত মাসিক সভায় আমরা মত বিনিময় করি। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দেই। আমাদের ইউনিয়নে বিভিন্ন কমিটিতে আমরা শিশু প্রতিনিধি হিসেবে তাদের সমান সুযোগ দেই। চলতি অর্থ-বছরে শিশুদের জন্য আমরা ২ লক্ষ ৫০ হাজর টাকা বাজেট রেখেছি। হত দরিদ্র শিশুদের লেখাপড়া ও খেলাধুলার মান উন্নয়নে আগামী অর্থ-বছরে শিশুদের জন্য আরো বেশি বাজেট রাখা হবে। শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও সেভ দ্য চিলড্রেনকে টেকনিক্যাল সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।