স্বাস্থ্য

পেটের সমস্যাসহ নানা রোগের মহৌষধ থানকুনি পাতা

By Daily Satkhira

December 01, 2016

স্বাস্থ্য ও জীবন: শাক বা পাতা, যেকোনো কারণেই হোক থানকুনি একটি পরিচিত নাম। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, আদাগুণগুণি নামে পরিচিত। স্বাদটা একটু তিতকুটে, তবে বেশ উপকারী। অসংখ্য রোগের উপশম মেলে এই থানকুনি পাতা খেলে। থানকুনি পাতার অসংখ্য উপকারী দিক- পেটের সমস্যা: পেটের দোষ বা মলের সঙ্গে শ্লেষ্ণা গেলে, মল পরিষ্কার ভাবে না হলে, পেটে গ্যাস হলে, কোনো কোনো সময় মাথা ধরা এসব ক্ষেত্রে ৩-৪ চা চামচ থানকুনি পাতার গরম রস ও সমপরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন। এছাড়াও অল্প পরিমাণ আমগাছের ছাল, আনারসের কচি পাতা ১টি, কাঁচা হলুদের রস, ৪/৫ টি থানকুনি গাছ শিকড়সহ ভাল করে ধুয়ে একত্রে বেটে রস করে খালি পেটে খেলে পেটের পীড়া ভাল হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি কার্যকর। আধা কেজি দুধে ১ পোয়া মিশ্রি ও আধা পোয়া থানকুনি পাতার রস একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ১ সপ্তাহ খেলে গ্যাস্ট্রিক ভাল হয়। বেগুন অথবা পেঁপের সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে শুকতা রান্না করে প্রতিদিন ১ মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার, আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে ৫/৭ টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে ৭ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়। অথবা, থানকুনি পাতা বেটে পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে দুই চামচ দিনে দুই বার খেলে আমাশয় ভাল হয়। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে: যদি মুখ মলিন বা লাবণ্যতা কমে যায় তবে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধ দিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত করলে উপকার পাবেন। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে ত্বকের সতেজতা বাড়ে। অপুষ্টির অভাবে, ভিটামিনের অভাবে চুল পড়লে পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। খুসখুসে কাশিতে: ২ চামচ থানকুনির রস সামান্য চিনিসহ খেলে সঙ্গে সঙ্গে খুসখুসে কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। ১ সপ্তাহ খেলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়াও ঠা-ায় নাক বন্ধ হলে, সর্দি হলে থানকুনির শিকড় ও ডাঁটার মিহি গুঁড়ার নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়। ঠা-া লাগলে ২০-২৫ ফোঁটা থানকুনির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। লিভারের সমস্যা: প্রতিদিন সকালে থানকুনির রস ১ চামচ, ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রস (বাচ্চাদের লিভারের সমস্যায়) সামান্য চিনি ও মধুসহ ১ মাস খেলে লিভারের সমস্যা ভাল হয়। ক্ষত সারাতে: মূলসহ সমগ্র গাছ নিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে দূষিত ক্ষত ধুলে ক্ষত ভালো হয়ে যাবে। কোথাও থেঁতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন। থানকুনি পাতা বেটে ঘিয়ের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঠা-া করে তা সাধারণ ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে। থানকুনি পাতা চামড়া মসৃণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার রস ১ চামচ ও শিউলি পাতার রস ১ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর সারে। শরীরের ব্যাথা উপশমে: কোমরের ব্যাথা নিরাময়ে খান থানকুনি পাতার রস। যাদের হাতের কব্জি, পায়ের গোড়ালীতে ব্যাতা আছে তারা থানকুনি পাতার রস দিয়ে মালিশ করলে ব্যাতা উপশম হবে। স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে: স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য আধা কাপ দুধ, ২-৩ তোলা থানকুনি পাতার রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে। চর্মরোগের সমস্যা: মুখে ঘা হলে থানকুনি পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে কুলি করলে ঘা কমে যায়। আলসার এগজিমা, হাঁপানি, চুলকানি ও অন্যান্য চর্মরোগ সারাতে থানকুনি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে: দৃষ্টির অস্পষ্টতা রোধে শুকনো গরুর দুধের সাথে থানকুনির গুড়া ১/২ চামচ, ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রস ও ১ চা চামচ মধু/ মিশিয়ে ৭ দিন খেলে রক্ত দূষণ ভাল হয়। থানকুনি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। সংবহনতন্ত্রের স্থায়ীভাবে স্ফীত ও বর্ধিত শিরা কমাতে সহায়তা করে। এই পাতা শুকিয়ে এই গুড়া দিয়ে চা বানিয়ে প্রতিদিন খেলে শরীর সুস্থ থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।অবশ্যই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।