ফিচার

কলেজ ছাত্রী অপহরণ ও ধর্ষণ; সাতক্ষীরায় এক ব্যক্তির ডাবল যাবজ্জীবন

By Daily Satkhira

July 31, 2018

আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরায় কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দু’টি ধারায় এক ব্যক্তির পৃথক পৃথক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার এ আদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম, জাহিদুল ইসলাম শুভ(৩৫)। তিনি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার কাপড়পোড়া গ্রামের আওরঙ্গজেবের ছেলে। মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গোছমারা গ্রামের প্রবাসী শহীদুল ইসলামের মেয়ে খোদেজা ইসলাম শিল্পী (২৮) একই উপজেলার তুলসীডাঙা গ্রামে তার মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করতো। শিল্পী ঢাকা ইডেন মহাবিদ্যালয়ে ইতিহাসে সম্মান ডিগ্রী প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করাকালিন মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় জাহিদুল ইসলাম ওরফে শুভ’র সাথে। পরবর্তীতে জাহিদুল শিল্পীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাবা বিদেশে থাকার কারণে মা ও মামার বাড়ির লোকজন রাজী হয়নি। একপর্যায়ে মামার বাড়িতে অবস্থান করাকালে ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি জাহিদুলসহ তার কয়েকজন বন্ধু সেখানে বেড়াতে আসে। তাকে বেড়ানোর নাম করে কুষ্টিয়ায় নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় জাহিদ । সেখানে জাহিদের স্ত্রী ও দু’ সস্তান দেখতে পেয়ে বিয়েতে রাজী হয়নি শিল্পী। ফলে শিল্পীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যেয়ে নগ্ন ছবি তুলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে ওই বছরের ২১ জানুয়ারি বিয়ে করতে বাধ্য করে জাহিদুল। এরপর ৩১ জানুয়ারি মা আনোয়ারা খাতুন ও মামা রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন তাকে তালাক দিয়ে শিল্পীকে বাড়িতে নিয়ে আসে। কয়েকদিন পর শিল্পী ঢাকার ইডেন কলেজে পড়তে চলে যায়। ওই বছরের ২৫ মার্চ ইডেন কলেজের সামনে থেকে শিল্পীকে অপহরণ করে কুষ্টিয়ার বাড়িতে নিয়ে আটক রাখে জাহিদুলসহ কয়েকজন। ২২ এপ্রিল শিল্পী পালিয়ে মামার বাড়িতে চলে আসে আসে। ২৪ এপ্রিল অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণের নগ্ন চিত্র ধারনের অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিয়েছে মর্মে একটি চিরকুটে লিখে রাখে। রাতে সে মামার বাড়ির একটি বসতঘরে আড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের মামা রবিউল ইসলাম শিল্পীকে অপহরণ ও ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করতে বাধ্য করানোর কথা উল্লেখ করে ২৫ এপ্রিল কলারোয়া খানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক শেখ মেজবাহউদ্দিন ২০১০ সালের ২৯ আগষ্ট জাহিদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার ১২জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা করে আসামী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৭ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন। একই সাথে একই আইনের ৯(ক) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগে আবারো যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদন্ডাদেশ দেন। তবে আসামী জাহিদুল ইসলাম এ রায়ের সময় পলাতক ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু ও সহকারি পিপি অ্যাড. নাদিরা পারভিন।