নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সাপখালি ও পুটিমারা খালের পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করে দু’ যুবলীগ নেতাসহ একটি মহলের মাছ চাষের জন্য বসানো নেট ও পাটা অপসারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার নুর আহম্মেদ মাসুম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ নেটপাটা অপসারণ করা হয়। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক সরদার, সমীর কুমার ম-ল, ফরিদপুর গ্রামের জিন্নাত আলীসহ কয়েকজন জানান, সুন্দরবনের চুনা নদীর মৌতলার চাতরা স্লুইজ গেট থেকে সাপখালি খাল প্রবাহিত হয়ে নেঙ্গি, বামনহাট, পারুলগাছা, ফরিদপুর, বেজুয়া লক্ষীনাথপুর হয়ে যমুনা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ওইসব গ্রাম ছাড়াও জিরনগাছা, উত্তরশ্রীপুর, দক্ষিণশ্রীপুর, চাঁচাই, হোগলা, জয়পত্রকাটি, মুকুন্দমধুসুধনপুর, কোমরপুর, শ্রীরামপুরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪০টি বিলের বর্ষার পানি সাপখালি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। একইভাবে কালিকাপুরের ডাগরখালি থেকে পুটিমারার খালের উৎপত্তি হয়ে কোমরপুর, বন্দকাটি, নৌবাসপুর, জয়পত্রকাটি, নীলকণ্ঠপুর হয়ে বাঁশতলা খালে মিশেছে। ওইসব গ্রাম ছাড়াও তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি বিলের বর্ষার পানি এ খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে আসছে। স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ ও খেটে খাওয়া মানুষ বংশপরম্পরায় ওইসব খালে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলম ঢালীর নেতৃত্বে শাজাহান ঢালী, বাদশা, সেকেন্দার ১০/১২ জনের একটি টিম ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে জগবেড়ে থেকে সাপমারা খালের আমিন শেখের দীঘির পাশ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার খাল দখল করে গৌরানা খালের মুখে, বকলমরাররদহসহ পাঁচটি স্থানে খালের উপর আড়াআড়ি নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের এক ব্যক্তি কিছুটা জায়গায় নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করতে থাকেন। এতে বর্ষা মৌসুমে খালে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। প্রতিবাদ করায় সাধারণ গ্রামবাসিকে হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি গত ১৯ জুন রাত ৮টার দিকে জিন্নাত আলীকে ফরিদপুর ব্রীজের পাশ থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর পারুলগাছা আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে চোর সাজিয়ে উপ-পরিদর্শক নিয়াজ মোহাম্মদ খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাকে মুচলেকা দিয়ে ২৬ হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্ত করিয়ে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে আলম ঢালী, তার সহযোগী বাদশা, শাজাহান ঢালী, আরশাদ, হবি, রাজু, সেকেন্দার, হোগলা গ্রামের আরশাদ আলী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একইভাবে গত বছরের এপ্রিল মাসে কোমরপুর মোড়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর দেবনাথের নেতৃত্বে আলম ঢালী, বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজের ভাগ্নে ফিরোজ লস্কর, ফিরোজ মোড়ল, আব্দুস সবুর, মাসুম, কামরুলসহ কয়েকজন কোমরপুর নামকস্থানে খালের উপর আড়াআড়ি নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। খাল থেকে শ্যালো মেশিনে ঘেরে পানি তোলার জন্য ইচ্ছামত চাঁদার টাকা নিয়ে থাকেন কিঙ্কর। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিতে খালের পানি সরতে না পারায় দু’পাশের চিংড়ি ঘের ও ফসলী খেত ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। নুরুল হক সরদার ও সমীর ম-ল আরো জানান, সাপখালি ও পুটিমারার খালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জেলে সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ উন্মুক্ত খালে মাছ ধরতে না পেরে পেশা পরিবর্তন করে শহরে রিক্সা ওভ্যান চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। গত শনিবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকসহ ইলেকট্রিক মিডিয়াতে প্রচারিত হয়। ফলে প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। শনিবার তড়িঘড়ি করে কিঙ্কর দেবনাথ কোমরপুর মোড়ে পুটিমারা খালের উপর বসানো নেটপাটা সরিয়ে নেয়। তবে আলম ঢালী ও তার সহযোগিরা মহড়া অব্যহত রাখে। একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনার নুর আহম্মেদ মাসুম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে জয়পত্রকাটি ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহশীলদার আইনুল হকসহ সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের একটি টিম নেঙ্গী বিলে জবেদ আলী মেম্বরের বাড়ির পাশ থেকে সাপখালি খালের উপর পাটা অপসারন শুরু করে। তারপর চাতরা হয়ে গৌরানা, বকলমারারদহ, আমিন শেখের ঘেরের পার্শ্ববর্তী হয়ে পারুলগাছা পর্যন্ত নেটপাটা অপসারন করা হয়। খবর পেয়ে আলম ঢালী ও তার লোকজন খালে পাতা আটল তুলে নিয়ে ভোঁ দৌড় দেয়। পরে কোমরপুর হয়ে বন্দকাটি ও মুকুন্দমধুসুধনপুরের নেটপাটা অপসারন করা হয়। এ সময় কিঙ্কর দেবনাথ ফিরোজ লস্কর, ফিরোজ মোড়ল, আব্দুস সবুর, মাসুম, কামরুলসহ তাদের সহযোগিদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। নেটপাটা অপসারনের সাথে সাথে সাধারণ মানুষ জাল দিয়ে উন্মুক্ত খালে মাছ ধরা শুরু করে। বিকেলে ফরিদপুর মসজিদে মসজিদে মিলাদ দেওয়া হয়। তবে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয়ে একটি মহল সাপখালি খালের একটি অংশ তাদের ইজারা আছে দাবি করে সাধারণ মানুষকে তাতে মাছ না ধরতে পুলিশের সহায়তা চাওয়াকে কেন্দ্র করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে কালিগঞ্জ সহকারি ভূমি কমিশনার নুর আহম্মেদ মাসুম জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কঠোর অবস্থানের কারণে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গার সাপখালি ও পুটিমারা খালের উপর থেকে নেটপাটা সরানো হয়েছে। তবে গোপালগঞ্জের এক ব্যক্তি যেখানে মাছ চাষ করছেন তার দখলীয় জায়গায় তারা কাজ করেননি। তবে যত বাধাই আসুক না কেন জনস্বার্থে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।