দেশের খবর: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক। সরকার তাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’ তিনি জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিনি কনফারেন্স রুমে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাস মালিক সমিতির নেতা এনায়েতউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৯ জুলাইয়ের ঘটনাটি দুঃখজনক। যারা এটি ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাবালে নূর পরিবহন দুটির ড্রাইভার ও হেলপারকে (চারজন) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেফতার করাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গাড়ি দুটির রেজিস্ট্রেশন ও রোড পারমিট বাতিল করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় এ জন্য তদন্ত চলছে।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোমলমতি শিশুরা আজ তিনদিন ধরে রাস্তায় অবস্থান করছে। তাদের মতো আমরাও ব্যথিত। এ বিষয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ঢাকায় নেই। শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। তারা চাচ্ছে ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। তাদের সব দাবি যৌক্তিক।’ তিনি জানান, ‘স্টার্টিং পয়েন্টে গাড়ির ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে প্রতিদিন রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ থেকেই এটা শুরু হয়েছে। এসব পরীক্ষার সময় বিআরটিএকে সহযোগিতা করবে মালিক ও শ্রমিকরা। পুলিশ বিষয়টি তদারকি করবে। আমরা দেখেছি গাড়ি পরিচালনায় প্রতিযোগিতা চলে। আমরা সেগুলো দেখবো।’ মন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এই অবরোধ তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতা চায়। আপনারা আপনাদের সন্তানদের, শিক্ষার্থীদের ঘরে-ক্লাসে ফিরিয়ে নিন। সরকার সব দাবি মেনে নিয়েছে, এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।’ ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এর সুযোগ নিচ্ছে। গত তিন দিনে ৩০৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আটটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশের তিনটি ও ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি রয়েছে।’ ছাত্রদের অবরোধের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় নামার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নেমেছিল তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন কোনও অবরোধ চললে সেখানে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা কোনও ক্রমেই সংঘর্ষে যাবে না। মালিকরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’ বৈঠকে কেন এসেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে। যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমি সহযোগিতা করবো।’ এ ঘটনাটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছেন এমন প্রশ্নে শাজাহান খান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী যেটা হত্যা, সেটা হত্যা। আর যেটা দুর্ঘটনা, সেটা দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ নৌমন্ত্রীর বৈঠকে আসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি শ্রমিক সংগঠন পরিচালনা করেন এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মালিক সংগঠন পরিচালনা করেন। সে কারণেই তাদের আমি বৈঠকে ডেকেছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা মালিক ও চালকরা যেভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলবে, তেমনি পথচারীদেরও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।’ অনেক মালিক রয়েছেন, যারা মন্ত্রী-এমপি, তাদের গাড়ি পুলিশ ধরলে ফোন করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়, এ অবস্থায় আইনের প্রয়োগ সম্ভব কিনা-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। ক্ষমতাশালীরা এখন আর কোনও সুযোগ পায় না। রাজধানীতে প্রতিদিন মোটরসাইকেলসহ ১৫০টি যানবাহন রাস্তায় নামছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।