দেশের খবর: রাজধানী ঢাকার বর্জ্য থেকে এবার বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে সিএনজিচালিত যেকোনও পরিবহন চলবে। জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড। প্রাথমিকভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসাবাড়ির ফেলা দেওয়া বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি এই গ্যাস উৎপাদন করবে। বায়োগ্যাস ছাড়াও এ প্রকল্পের মাধ্যমে মেডিক্যালে ব্যবহৃত গ্যাস মিলবে, একইসঙ্গে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ ও জৈব-সার। ঢাকার বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য অনুমতি চেয়ে ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর ডিএসসিসি দফতরে আবেদন করে লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড। গত ২৫ জুলাই এক বোর্ড সভায় এ আবেদনে অনুমোদন দেয় ডিএসসিসি। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, তাদের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার নওয়াপাড়া লৌহজং রোডে অবস্থিত লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে দৈনিক ৬০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করার অনুমোদন পেয়েছে। এই বর্জ্য থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক চার হাজার ৬৯৫ দশমিক ৬২ কিউবিক মিটার বিদ্যুৎ ও ১৮ হাজার ৬৩০ কেজি জৈব-সার উৎপাদন করবে। এভাবে রাজধানীর বর্জ্য থেকে বছরে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ কিউবিক মিটার গ্যাস ও ৬৮ লাখ কেজি জৈব-সার উৎপাদিত হবে। প্রতিদিন যে পরিমাণ বায়োগ্যাস উৎপাদিত হবে তা দিয়ে ১৫০টির মতো গাড়ি চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদিত গ্যাস সিলিন্ডারজাত করে বাসাবাড়িতেও ব্যবহার করা যাবে। লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড সূত্র জানায়, ফিনল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব-সার উৎপাদন করা হবে। এ ধরনের প্রকল্প ফিনল্যান্ডেও রয়েছে। আর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সে দেশের সরকার বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও সার উৎপাদনের জন্য অর্থ খরচ করে বর্জ্য উৎপাদন করছে। তারা বর্জ্য পাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই এই বর্জ্যকে ব্যবহার করে সম্পদে পরিণত করতে চায় তারা। এ কোম্পানির অন্য এক সূত্র জানায়, কোম্পানির নিজস্ব বিনিয়োগ ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিডেটের আর্থিক সহায়তায় ফিনল্যান্ডের বায়োজিট কোম্পানির যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের শেষের দিকে উৎপাদনে যাবে। এ সূত্র আরও জানায়, এই শিল্প প্রকল্প স্থাপনের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ বন্ধ হবে, অন্যদিকে প্রচলিত জ্বালানিতে যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে সৃষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছড়ানোও বন্ধ হবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া, জৈব-সারের মাধ্যমে একদিকে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে কেমিক্যালমুক্ত ফলনও বৃদ্ধি পাবে। সূত্র জানায়, পাশের দেশ ভারতেও বায়োগ্যাস থেকে গাড়ি চালানো হয়। তবে সে বায়োগ্যাস ভারতের বীরভূমের দুবরাজপুরের কারখানায় গোবর থেকে উৎপাদন করা হয়, যা পরে ট্যাঙ্কারে করে কলকাতা নিয়ে আসা হয়। গোবর থেকে উৎপাদিত বায়োগ্যাসের চেয়ে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত বায়োগ্যাসের চাপ অনেক বেশি। বর্তমানে ভারতের বীরভূমের দুবরাজপুরের কারখানায় গোবর থেকে প্রতিদিন একহাজার কেজি বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হয়। প্রতিকেজি ২০ টাকা দামের প্রতিকেজি বায়োগ্যাসে একটি বাস প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। এ ব্যাপারে লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, প্রকল্পটি দেশের জন্য একটি অতীব প্রয়োজনী ও কল্যাণকর শিল্প প্রকল্প হিসেব আত্মপ্রকাশ করবে। অচিরেই এই প্রকল্পের অনুকরণে দেশে অনেক শিল্প প্রকল্প গড়ে উঠবে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।’ ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আ.হ.ম আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ‘আমাদের বর্জ্য ব্যবহার করে গ্যাস ও সার উৎপাদন করার জন্য লৌহজং বায়োগ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যানকে অনুমোদন দিয়েছি। বিষয়টি ইতিবাচক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিএসসিসির এলাকায় যেমন বর্জ্যের স্তুপ কমবে, তেমনি গ্যাস ও সার উৎপাদিত হবে।’