নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ অবশেষে ভাড়া দেওয়া গুদাম ঘর বুঝে পেলেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের তপন বিশ্বাস। ভাড়া গ্রহীতা মাছ ব্যবসায়ি শহরের রাধানগরের মাহাবুবর রহমান বিশ্বাস জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোশাররফ হোসেন মশুর মাধ্যমে শনিবার দুপুর দু’ টোর দিকে এ ঘর বুঝিয়ে দেন। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, রাধানগরের মাছ ব্যবসায়ি মাহাবুব বিশ্বাসের কাছে ২০০৪ সাল থেকে দু’ দফায় নিজেন বাড়ি সংলগ্ন গুদামঘর ভাড়া দেন দক্ষিণ পারুলিয়ার মৃত লালু বিশ্বাসের ছেলে তপন বিশ্বাস। ১৯৯৭ সালে তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে কেনা চার শতক জমি বুঝে পাওয়ার পরও ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকা ওই গুদামঘরসহ চারশতক জমি নিয়ে ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন একই গ্রামের আবুল হোসেন। মাহবুবর রহমানের মাছ সরবরাহকারি পারুলিয়া এলাকার ,কুখ্যাত চোরাকারবারি, বাঘের চামড়া পাচারকারি নব্য আওয়ামী লীগার নূর আমিন গাজীর ইন্ধনে ওই গুদাম ঘর দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন আবুল হোসেন। এদিকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চুক্তিপত্র থাকার পরও ভাড়া নেওয়া গুদামঘর তপন বিশ্বাসকে ফিরিয়ে দিতে নুর আমিন ও আবুল হোসেনের হুমকির সম্মুখীন হন মাহাবুবর রহমান বিশ্বাস। হুমকি দিয়ে গুদামঘরের পাশের খালি জায়গা তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে বাবা আহম্মদ আলীর ভাড়া নেওয়া জায়গা দখলের চেষ্টায় থাকেন রুবেল হোসেন। দেওয়ানী আদালতের মামলাকে পুজি করে আবুল হোসেন, নুর আমিন গাজী, তাজুল, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেলসহ কয়েকজন কয়েকবার ওই গুদামঘর দখলের চেষ্টা করেন। এদিকে মাহাবুব বিশ্বাস ঘর বুঝিয়ে না দেওয়ায় গত ৫ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাননি তপন বিশ্বাস। হাইকোর্ট আবুল হোসেনসহ ২০ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে গত ৮ এপ্রিল স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। খবর পেয়ে আবুল হোসেন ও তার লোকজন গত ১৭ এপ্রিল ভাড়াটিয়া মাহাবুব বিশ্বাসের লাগানো গুদামঘরের তালা খুলে ফেলে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে গুদামঘরের একটি জানালা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ১৮ ও ২২ এপ্রিল দেবহাটা থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। দু’টি ডায়েরীর তদন্তে পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম আবুল কাশেম, নুর আমিন গাজী ও তাজুল ইসলামসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নন এফআইআর মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের অনুমতি চান। অনুমতি পাওয়ার পরপরই তিনি পাটকেলঘাটা থানায় বদলী হয়ে গেলে পরবর্তীতে উপপরিদর্শক উজ্জ্বল রায় নন এফআই আর মামলা না রেকর্ড করে নুর আমিন গাজী ও তাজুল ইসলামকে বাদ দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে টালবাহানা করে যাচ্ছেন। হাইকোর্টের আদেশ পেয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিরোধী ২০ জনকে নোটিশ করে দুপুরে গুদাম ঘরের দেয়ালে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত সাইন বোর্ড সেঁটে দেন আদালতের জারিকারক। অথচ রাত ৮টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে আবুল হোসেন, নুর আমিন গাজী, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেল, পলাশ, তাজুল, মাদক ব্যবসায়ি হাফিজুল ইসলামসহ কমপক্ষে ২০/২৫ জন ওই সাইনবোর্ডের একাংশ ছাড়িয়ে ফেলে পাশে ক্রয় সূত্রে এ জমির মালিক আবুল হোসেন বলে লেখা একটি সাইন বোর্ড দেয়ালে সেটে দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেননি। পুলিশের ভুমিকার কারণে গত ৮ মে বিকেলে নূর আমিন গাজী, তার আত্মীয় মাহাবুবর রহমান খোকন তার(তপন) জায়গা জবরদখলের সুবিধার্থে তপন বিশ্বাসের ছেলে সাংবাদিক অনুপ বিশ্বাসকে মাদক ব্যবসায়ি হাফিজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে মোটর সাইকেলের সিটের পাশে ইয়াবা রেখে গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে আটক করায়। সাতক্ষীরার কয়েকজন সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে পুলিশ সুপারের রিনর্দেশে রাত ১১টার দিকে অনুপকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে জানতে পেরে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান দেবহাটা থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলীকে ভাড়াটিয়া মাহাবুব বিশ্বাসের কাছ থেকে তপন বিশ্বাসের গুদামঘর বুঝিয়ে নেওয়ার কাজে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে নির্যাতিত তপন বিশ্বাস আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান ও দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জানতে চাইলে দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলী জানান, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গায়ের জোরে কেউ কারো জমি দখলের চেষ্টা করলে তা মানা হবে না। হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও দীর্ঘদিনের দখলীকার তপন বিশ্বাস জমি বুঝে পাবে না সেটা হয় না। সেক্ষেত্রে রুবেল , কাশেম বা মাহাবুবর রহমান কেউ আইনের উর্দ্ধে নন।