আশাশুনি ব্যুরো : আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে চড়া সুদের ছোবলে একাধিক অসহায় পরিবার নিঃশ্ব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুদের টাকা যোগাড় করতে সহায় সম্বল এমনকি সর্বশেষ বসত ভিটা খুয়িয়েও শেষ রক্ষা না পেয়ে জন্মস্থান ছাড়তে বধ্য হয়েছে একাধিক পরিবার। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অভিযুক্ত এলাকায় সুদে মহাজনদের একটা সেন্ডিকেট কাজ করছে। একজনের টাকা সুদে দেওয়া হচ্ছে একাধিক ব্যক্তির হাত দিয়ে নতুন নতুন ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্প ও চেকের মাধ্যমে চড়া থেকে চড়া সুদে। বড়দলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও একাধিক ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, এক লক্ষ টাকা সুদে নিলে প্রতিদিন ২২০০ টাকা সুদ দেয়া লাগে সুদে মহাজনকে। সুদের টাকা দিতে সময় ক্ষেপন করলে সুদের টাকারও সুদ গুনতে হয় দ্বিগুন হারে। এমনই এত চড়া সুদের ছোবলে নিঃশ্ব হয়ে জন্মস্থান ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফকরাবাদ গ্রামের দাউদ সরদারের পুত্র আছাদুল সরদার। আছাদুল সরদারের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন(৩৫) এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী ৬ মাস পূর্বে গোয়ালগাংগা বাজারের গীতাঞ্জলী জুয়েলার্সের মালিক বিশ্বনাথ শীল থেকে তার দোকানের ব্যবসার জন্য কিছু টাকা সুদে নেন। সময় মত সুদের কাটা দিতে না পারায় সুদে মহাজন বিশ্বনাথের থেকে চড়া সুদে আরও টাকা নিয়ে তার সুদের টাকা দিতে থাকেন। মাস খানেক পরে বিশ্বনাথের সুদের টাকা যোগান দিতে তার স্বামী (আছাদুল) পর্যায়ক্রমে বাজারের তোহা টেলিকমের মালিক তোহা গাজী, গোয়ালডাংগা গ্রামের আনন্দ বিশ্বাসের পুত্র নিত্য বিশ্বাস, মোক্তার সরদারের পুত্র শামিম, কেয়ারগাতী গ্রামের অমেদ আলীর পুত্র বাজারের সানমুন টেলিকমের মালিক আছাফুরের থেকে চড়া সুদে টাকা নিতে শুরু করেন। এভাবে ৬ মাস যেতে না যেতেই আমাদের শেষ সম্বল ৩ বিঘা জমি বিক্রি করে সুদের টাকা দিয়েও আজ আমার স্বামীর ঘাড়ে ১২ লক্ষ সুদের টাকার ঘাণী নিয়ে বাড়ি ছাড়া। তিন সন্তান ও শ্বাশুড়ী নিয়ে আজ আমি পথের ভিখারী। ফকরাবাদ গ্রামের শহিদ বিশ্বাসের পুত্র ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস(৩৩) জানান, আমি প্রথমে খোকন গাজীর পুত্র বাজারের তোহা টেলিকমের মালিক তোহা গাজীর থেকে ২০ হাজার টাকা সুদে নেই। পরে তার সুদের টাকা সময় মত না দিতে পারায় সে আমাকে অন্য এক জনের কাছে পাঠিয়ে দেয় যেখানে জামানত হিসাবে লাগবে ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প এবং সুদের হারও বেশি। এভাবে সুদের টাকা যোগাতে এক মহাজন থেকে অন্য মহাজন ঘুরে সুদের হার বাড়াতে বাড়াতে আজ আমি ১০ লক্ষ সুদের টাকার ঘানী টানতে ব্যর্থ হয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অভিযুক্ত আছাফুর এ প্রতিবেদককে জানান, তার সাথে আছাদুলের কোন লেনদেন নাই এমনকি তার(আছাদুলের) কোন স্ট্যাম্প বা চেক তার কাছে নেই। তবে তোহা গাজী এবং বিশ্বনাথ শীলের সাথে আছাদুলের লেনদেন আছে যে কারনে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তোহা গাজী জানান, আছাদুলের সাথে তার কোন লেনদেন নেই। বিশ্বনাথ শীলের ব্যবহৃত মোবাইল নং ০১৭৪৮-৯৬৮২৮৫ ও ০১৯৩৯-৪২০০২০ তে বহুবার রিং দিয়েও ফোন রিসিভ হয়নি। এলাকার সচেতন মহলের দাবি উল্লেখিত সুদখোরদের বাহিরে বুড়িয়া গ্রামের মগর গাজীর পুত্র সিরাজুল গাজী ছাড়াও বহু ছোট বড় সুদখোর বর্তমানে বড়দলের বিভিন্ন এলাকায় তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এ সুদের টাকা আদাই করাকে কেন্দ্র করে বহু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে এলাকায়। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ এলাকার সুদখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
০৬.০৮.২০১৮