স্বাস্থ্য

নারী হৃদরোগীদের জন্য নারী ডাক্তাররাই সেরা

By daily satkhira

August 08, 2018

স্বাস্থ্য কণিকা: যেসব নারী হৃদরোগে আক্রান্ত বা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তাদের চিকিৎসা যদি হাসপাতালে একজন নারী ডাক্তারকে দিয়ে করানো হয় তাহলে তাঁর বেচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৯ বছর ধরে ৫ লাখ ৮০ হাজার হার্ট এটাকে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এ সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যেসব রোগীদের পুরুষ ডাক্তার দেখভাল করেছেন তাদের মধ্যে ১৩ দশমিক তিন শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছে। অন্যদিকে নারী ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা রোগীদের মধ্য মারা গেছে ১২ শতাংশ। তবে কোন পুরুষ ডাক্তারের দলে যদি বেশ কয়েকজন নারী সহকর্মী থাকেন তাহলেও রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষকরা একটি তত্ত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, নারী রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক পুরুষ চিকিৎসক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বলেছে যে এই ফলাফলগুলি যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলিতে প্রয়োগের আগে এ নিয়ে আরও কাজ প্রয়োজন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ফ্লোরিডা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া বিভিন্ন রোগীদের মেডিকেল তথ্য পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। রোগীদের বয়স, জাতি এবং মেডিকেল ইতিহাসের মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করার পর, তারা দেখেছেন যে একজন রোগীকে যদি একজন নারী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়, তবে রোগীর হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে ফলাফলের পার্থক্য নারী রোগীদের ওপর প্রভাব ফেলে সবচেয়ে বেশি। পুরুষ ডাক্তাররা যখন হৃদরোগীদের চিকিৎসা করেছিলেন তখন পুরুষ রোগীর মৃত্যুর হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে সেটা বেড়ে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে ঠেকেছিল। কিন্তু যখন একজন নারী চিকিৎসক যখন চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তখন সেই শতাংশের হার পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে ১১.৮% এবং নারী রোগীদের ক্ষেত্রে ১২% এ নেমে আসে। সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. শেঠ কারনারহান বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষ ডাক্তারের চেয়ে নারী চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রোগীদের অবস্থার উন্নতি তাড়াতাড়ি হয়েছে।” আমাদের গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে একজন নারী চিকিৎসকের উপকারিতা বিশেষ করে একজন নারী রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রভাব ফেলে।” গবেষণা দলটি আরও জানায় যে, হাসপাতালে দুর্ঘটনা এবং জরুরী ইউনিটে নারী চিকিৎসকের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে সেখানে আসা নারী রোগীদের বেঁচে থাকার হার। নারী চিকিৎসক যতো বেশি থাকে, নারী রোগীদের সেরে ওঠার সম্ভাবনা ততোই বেড়ে যায় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। এবং সেই ইউনিটের প্রধান যদি একজন পুরুষ চিকিৎসক থাকে তাহলে তা আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষকদের মতে, চিকিৎসকদের হয়তো এমন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে যে হৃদরোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরা আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। তবে, এ ধরণের গবেষণায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানান গবেষকরা। কারণ গবেষণাটি এটা প্রমাণ করতে পারে না যে, শুধুমাত্র নারী চিকিৎসকদের উপস্থিতি রোগীদের সেরে ওঠার হার বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মাউরিন টালবোট বলেন, “হার্ট এটাকে আক্রান্ত নারী ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে দাতব্য সংস্থা পূর্বে যে গবেষণা পরিচালনা করেছিল তার ফলাফলে উদ্বেগজনক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।” তিনি বলেন “গবেষণাটি এই তত্ত্ব সমর্থন করছে ঠিকই, তবে এখানে পক্ষপাতিত্ব বিদ্যমান কিনা তা দেখার জন্য যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোয় এ সংক্রান্ত আরও গবেষণার প্রয়োজন।” “এটা আমাদের জন্য বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে রোগীর যত্নের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।” জানান মাউরিন টালবোট এছাড়া এইচএইচএফ ইতোমধ্যে গবেষণা করছে যে হৃদরোগে আক্রান্ত নারীদের সেরে ওঠার হার কিভাবে উন্নত করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের -এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।