নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যবসায়ী আবুল কালামের ভিটেবাড়ি দখল করার জন্য বাড়ি-ঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা তাদের ঘরে থাকা নগদ দেড় লক্ষাধিক টাকা, ৫/৬ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। বাড়িতে থাকা টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় স্কুল ছাত্রী ও মহিলাসহ উভয় পক্ষের ৮/১০ আহত হয়েছে। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাধঘাটা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। বর্তমানে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত ৩ মে ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাধঘাটা গ্রামের আব্দুস সবুরের স্ত্রী সাবিনা ও ছেলে এমদাদুল হকের ২২ শতক জমির মধ্যে ৬ শতক জমি ক্রয় করেন। যার মধ্যে একটি ঘর ছিল। জমি ক্রয়ের পরপরই তারা দখলে যায়। সেখানে আবুল কালাম, তার ভাই নূর ইসলাম, আব্দুস ছালাম ও আব্দুস সাত্তার আরো ৫টি ঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছিলেন। সাবিনার সাথে তার দেবর আব্দুল বারীর একটি বাটোয়ারা মামলা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। শুক্রবার হঠাৎ করে আব্দুল বারী তার ভাই ও লোকজন নিয়ে সাবিনার বিক্রি জমি দখল নিতে যায়। এ সময় তারা সীমানা প্রাচীর ভেঙে ঘর-বাড়ি ও আসবাব পত্র ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘরে মধ্যে থাকা আবুল কালামের প্যারালাইসড বৃদ্ধ বাবা নূর আলী গাজী ও বৃদ্ধা মা জহুরা বেগমকে মারধর করে উঠানে ফেলে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আব্দুস সালামের স্ত্রী সাবিকুন নাহারের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। এতে সে রক্তাক্ত জখম হয়। এ ছাড়া নূর ইসলামের কলেজপড়–য়া মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিন ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা খাতুন, আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী রাশিদা বেগম ও আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন বেগম আহত হয়। আহতদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার সময় শ্যামনগর থানার এসআই রাজ কিশোরসহ ৬/৭জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এতবড় ঘটনা ঘটলেও তারা নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেন। এ সময় তারা হামলাকারীদের আটক না করে উপরন্ত সাবিনার স্কুল পড়–য়া ছেলে এমদাদুল, আব্দুস সালাম ও আবুল কালামকে থানায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদেরকে মুচলেকা দিয়ে জুম্মার নামাজের আগে ছেড়ে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করতে আব্দুল বারীর বাড়ির কাজের ছেলে মুজিবরকে থানায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর আবার তাকেও ছেড়ে দেয়। জুম্মার নামাজের পর হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলে আবুল কালামের ভাগ্নে জাবের হোসেনকে আটক করে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত জাবের থানা হাজতে ছিল। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মো. আব্দুস সালাম গাজী অভিযোগ করে বলেন, আবুল কাশেম তরফদারের ছেলে মো. আব্দুল বারী তরফদার, মো. আব্দুর রাজ্জাক তরফদার, মো. আব্দুল হাই, আব্দুল বারী তরফদারের স্ত্রী রেহানা বেগম, মেয়ে বিভা খাতুন, আব্দুল বারী, মো. মজু খাঁসহ আরো ৫০/৬০জন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তারা লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা রান্না ঘরসহ আটটি ঘর ভাংচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে বাধা দিতে গেলে আমাদের সকলের রক্তাক্ত জখম করে। আমরা নিরূপায় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করি। তবে আমাদের পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। অপরদিকে মাস্টার আব্দুল বারী অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই আব্দুস সবুরের কাছ থেকে আবুল কালাম ৬ শতক জমি ক্রয় করে। এ নিয়ে বাটোয়ারা মামলা চলছিল। শুক্রবার আমার বাড়ির সাথে দেয়া প্রাচীরটি ভেঙে দিতে বলি। এ সময় আমার বড় ভাই আব্দুস সবুরের ছেলে এমদাদুলসহ আবুল কালামের লোকজন আমাদের উপর হামলা করে। এতে আমার বৃদ্ধা আম্মা সায়েরা ও মেয়ে রিভা খাতুন, ভাই মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক ও মো. আব্দুল হাই আহত হয়েছে। আগতদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্যামনগর থানার এসআই রাজ কিশোর বলেন, ঘটনা শুনে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসা হয় এবং মিমাংসার জন্য চেষ্টা চলছে। আপনার উপস্থিতিতে একজন ব্যবসায়ীর বাড়ি-ঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অসম্ভব। আমি একজন প্রশাসনের লোক। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দেয়া আমার দায়িত্ব। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১০-০৮-১৮