দেশের খবর: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব, অপপ্রচার, বিকৃত ছবি ও ভিডিও প্রচার রোধে কনটেন্ট বা ইনফরমেশন ফিল্টারিংয়ের (পোস্ট, স্ট্যাটাস সরিয়ে বা মুছে ফেলা) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন হলে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে কোনও বাজে পোস্ট দিলে বা গুজব ছড়ানোর মতো কোনও তথ্য প্রকাশ করলে তা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থা দ্রুত সরিয়ে দিতে বা মুছে ফেলতে পারবে। এমনকি ব্লকও করতে পারবে। একইসঙ্গে যারা এগুলো করবেন তাদেরও দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে।
সরকার মনে করছে এর মাধ্যমে অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিব্রত হতে হবে না। চাইলেও কেউ সহজে গুজব ছড়াতে পারবে না। ‘সাইবার সিকিউরিটি ও মনিটরিং’ নামের এই প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার কেনা হয়েছে। হার্ডওয়্যার সেটআপ করতে দুই থেকে আড়াই মাস এবং সফটওয়্যার ইন্সটল করতে মাস খানেকের মতো লাগতে পারে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে তা চালু করা যাবে বলে জানা গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগই বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তা চালুর ব্যাপারে শতভাগ সচেষ্ট বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা ২০১৩ সালের একটি প্রকল্প। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘদিন পরে এই প্রকল্পের কাজে গতি এসেছে। ৩-৪ মাসের মধ্যে এটা চালু করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ফেসবুকসহ অন্য কোনও মাধ্যমে গুজব বা অপপ্রচার যেন না ছড়ায়। সেজন্য কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো গুজব ও অপপ্রচার যেন দেশের মধ্যে কোথাও দেখা না যায়।’ মন্ত্রী জানান, দেশের ভেতরে ফেসবুকে কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। কোনও কনটেন্ট বাদ দেওয়া বা অন্য বিষয়ে ফেসবুককে শুধু অনুরোধ করা যায়। ফেসবুক তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদের কাজগুলো করে থাকে। মন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক স্ট্যান্ডার্ড বলতে আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড মনে করে। আমরা ফেসবুককে বুঝিয়েছি তোমাদের স্ট্যান্ডার্ড আর আমাদেরটা এক নয়। তোমাদের দেশে যেটা গ্রহণযোগ্য সেটা আমাদের দেশে নাও হতে পারে। ফলে আমাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ড আমাদের চাওয়ার সঙ্গে মিললেই হবে।’ তিনি জানান, ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ফেসবুক এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ কথা শোনে, সাড়াও দেয় দ্রুত। ফলে ফেসবুক থেকেও সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
ফেসবুককে সক্রিয় করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ানো গুজব, অপপ্রচার কী পরিমাণ ক্ষতিকর, কী ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করে এরই মধ্যে ফেসবুককে জানানো হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফেসবুকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে যে কনটেন্ট ফিল্টারিং হবে সে তথ্যও ওই কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চাওয়া বিষয়গুলোর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ফেসবুকের ওই কর্মকর্তা।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বৈঠকে আমরা আমাদের চাওয়া তুলে ধরেছি। ফেসবুক ইতিবাচকভাবে বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছে।’ এটা মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও বাধা হবে না বলে দাবি করেন তিনি। জানা যায়, মন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে এসে মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করে। সেই বৈঠকের সুফল সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে ফেসবুকের কাছে কোনও তথ্য চাইলে তা অনেক সময় লাগাতো। অনেক সময় তথ্য দিতোও না। এখন আমরা তথ্য চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তা দিচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকের সঙ্গে ন্যূনতম কমিউনিকেশনটা আছে আমাদের।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং পোর্টাল ইউটিউব, মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্লগ ও ওয়েবসাইটও মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।