রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানা ভেজানো শিশু বয়সের একটি সাধারণ সমস্যা। দেখা গেছে, চার থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। কোনো কারণেই হোক, ছেলেদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এমনকি দেখা গেছে, ১২ বছরের ছেলেদের মধ্যেও প্রতি ১০ জনে একজন রাতে প্রস্রাব করে বিছানা ভেজায়। অনেক সময় শারীরিক সমস্যার কারণে শিশু রাতে বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে এবং সেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনোরকম ওষুধপত্র ছাড়াই শিশুর এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সময় এবং অভিভাবকের ধৈর্য। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এ ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। ১. নিজের ও সন্তানের দোষী দোষী মনোভাব দূর করুন সন্তান বিছানায় প্রস্রাব করে দেয় বলে মা-বাবার নিজেদের খারাপ মনে করার কোনো কারণ নেই। রাতে বিছানা ভেজানো একটি জৈবিক সমস্যা। শিশু ঘুমের মধ্যে তার মূত্রথলির স্ফিংটার বা দ্বার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিটি শিখে উঠতে পারে না বলেই এই সমস্যা হয়। খুব কম ক্ষেত্রেই শিশুর মানসিক সমস্যাকে এ জন্য দায়ী হিসেবে দেখা যায়। ২. শিশুকে শাস্তি দেওয়া যাবে না অনেক সময়ই দেখা যায়, সন্তান রাতে বিছানা ভেজায় বলে বাবা-মা তাকে শাস্তি দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিছানা ভেজানোর অপরাধে শিশুকে কখনোই শাস্তি দেওয়া বা বকাঝকা করা উচিত নয়। যেহেতু কোনো শিশুই ইচ্ছা করে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে দেয় না, তাই এ ক্ষেত্রে শাস্তি শুধু কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না। ৩. বিছানায় ক্লথ ব্যবহার করতে হবে যেসব শিশুর বিছানা ভেজানোর অভ্যাস আছে, তাদের বিছানায় রাতে ক্লথ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে বিছানার তোশক, ম্যাট্রেস—এগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এ ছাড়া শিশু ও তার মাও এই ভেবে স্বস্তি পাবে যে বিছানা পরিষ্কার করার জন্য খুব বেশি কষ্ট, যেমন—চাদর ও কাঁথা ধোয়া, তোশক রোদে দেওয়া ইত্যাদি করতে হবে না। ৪. শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য উৎসাহিত করুন আপনার শিশুকে বলতে হবে, আপনি আশা করছেন সে ভেজানো বিছানা পরিষ্কার করবে অথবা এ কাজে আপনাকে সাহায্য করবে। এমনকি যদি তার বয়স চার থেকে পাঁচ হয় তবুও। কেননা, এই বয়সের বাচ্চা সহজেই বিছানার চাদর বা ওয়েল ক্লথের ওপর বিছানো কাঁথা সরিয়ে নিয়ে ধোবার স্থানে রাখতে পারে। এটা করার উদ্দেশ্য, শিশুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং শিশুকে বুঝতে দেওয়ার যে নিজের বিছানা পরিষ্কার রাখাটা তার দায়িত্ব। ৫. শিশুর মতামত যাচাই করুন বিছানায় প্রস্রাব করা বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আগে যাচাই করে দেখতে হবে। যাচাই করতে হবে, সত্যিই সে ঘুমের মধ্যে বিছানা না ভিজিয়ে বাথরুমে গিয়ে প্রস্রাব করতে চায় কি না। কেননা, সত্যিই যদি শিশু তা না চায়, তাহলে এ বিষয়ে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই প্রথমে শিশুকে বোঝাতে হবে এবং তার মধ্যে রাতে বিছানা না ভেজানোর ইচ্ছা জাগাতে হবে। শিশু যখন নিজে নিজেই এটা বন্ধ করতে চাইবে, তখন সে এ বিষয়ে যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনি ঘুমের মধ্যে তার সচেতন মন তার অবচেতন মনের ওপর কাজ করে তাকে মাঝরাতে প্রস্রাব করার জন্য জেগে উঠতে সাহায্য করবে। ৬. শিশুর শোবার সময় বাড়ির পরিবেশ শান্ত রাখুন ঘুমের সময় চারদিকে এলোমেলো থাকলে, এমনকি টিভিতে কোনো উত্তেজনাকর অনুষ্ঠান থাকলে, অর্থাৎ ঘুমানোর সময় শান্ত মন নিয়ে ঘুমাতে না গেলে শিশুর ঘুমের মাঝে প্রস্রাব করে দেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কেননা, উত্তেজনা প্রস্রাব উৎপাদনের জন্য সহায়ক। তাই ঘুমানোর ঠিক আগে টেলিভিশন না দেখিয়ে শিশুকে গল্পের বই পড়তে দেওয়া যেতে পারে।