দেশের খবর: রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা আর অনিয়ম রোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আনফিট যানবাহন আর লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে চায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এক্ষেত্রে যান চলাচলকারী যানবাহনকে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে করা জরিমানার ৩০ শতাংশ অর্থ ট্রাফিক পুলিশকে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ হয়, বিশ্বের ব্যস্ততম শহরগুলোর অন্যতম রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পুলিশের প্রায় চার হাজার সদস্য। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এ মহানগরীতে আয়তনের তুলনায় রাস্তাঘাট অপ্রতুল। ফলে যানজট এখানকার একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্মাণাধীন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো থেকে নিঃসৃত ধুলাবালি এবং যানবাহন ও কল-কারখানা সৃষ্ট বায়ু ও শব্দ দূষণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি অত্যন্ত দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া একজন ট্রাফিক পুলিশকে ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও তার দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, ঢাকায় প্রতিনিয়ত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ট্রাফিক সদস্যদের প্রত্যেক পালায় (শিফটে) নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার ডিউটি শেষেও অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। আগে ট্রাফিক সদস্যদের দুই পালায় ডিউটি করতে হলেও বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের তিন পালায় ডিউটি করতে হচ্ছে। দিন-রাত তীব্র শব্দ ও সার্বক্ষণিক মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করার কারণে এ বিভাগের সদস্যদের অনেকেই মানসিক বৈকল্য, বধিরতা, ক্যান্সার, যক্ষ্মা, অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিভাগের সদস্যদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা বাবদ ব্যয় পরিশোধ করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটানো অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এই শহরের প্রাত্যহিক যান চলাচল নিশ্চিত করা, ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ আইনের প্রয়োগসহ ভিভিআইপি গমনাগমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ আস্থার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের এই কর্মতৎপরতা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রশংসিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল কমিটি ফর ইন্টেলিজেন্স কো-অর্ডিনেশনের (এনসিআইসি) সভায় ট্রাফিক পুলিশদের এসব সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সে সময় ট্রাফিক প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদায় হওয়া মোট জরিমানার একটি অংশ প্রতি মাসে বিভাগীয় সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অন্য কোনও আর্থিক খাত হতে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন পড়বে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার আরো উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত ট্রাফিক বিভাগের প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রতিমাসের আদায় করা জরিমানার ৩০ শতাংশ এই বিভাগে কর্মরত সদস্যদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এদিকে অনুমোদন না হলেও মাঠপর্যায়ে ট্রাফিক সদস্যরা এরইমধ্যে বিষয়টি জেনেছেন। এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনারের এই আবেদনটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।