অনলাইন ডেস্ক: আইসক্রিমের বাস্কের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। বাড়ির পেছনে দুটি শিশু ছুটে গিয়ে সেই আইসক্রিমের বাক্স খুলতেই তারা দেখতে পেল রক্তমাখা একটি নবজাতক ছেলে। শিশুরা বাড়ির মধ্যে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের জানালে তারা উদ্ধার করে শিশুটি। রোবাবার বিকেলে মুসলিমনগর পূর্ব পাড়া এলাকার মৃত হযরত আলী মাদবর ও সিদ্দিকের বাড়ির মাঝখানে পরিত্যাক্ত জায়গা থেকে শিশটিকে উদ্ধার করে বাড়ির ভাড়াটিয়ারা। এসময় সিদ্দিক মিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়ির টয়লেটের ভেন্টিলেটরসহ কয়েকটি স্থানে রক্তের দাগও দেখতে পায় এলাকাবাসী। তবে নবজাতকটি কার ঘরে জন্ম নিয়েছিল তা নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ। শিশুটিকে রোববার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় নিয়ে আসার পর অফিসার ইনচার্জ শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের পিপিএম শিশুটিকে পুলিশ সদস্য ময়েজে আহম্মেদের কাছে জিডি মূলে তুলে দেন। ফুটফুটে একটি ছেলে শিশু। তার পিতৃ বা মাতৃ পরিচয় নেই। শিশুটির নাড়ীও ঠিক মতো কাটা ছিল না। শরীরে লেপ্টে ছিল ভূমিষ্ট হওয়ার মায়ের রক্ত। শিশুটিকে মুসলিমনগর পূর্ব পাড়া এলাকার মৃত হাজী হযরত আলী মাতবর ও সিদ্দিক মিয়ার বাড়ির মাঝখান থেকে উদ্ধার করে বেশ কয়েকজন। তাকে উদ্ধার করে তার নাড়ী কাটে হান্নান মিয়ার স্ত্রী। এসময় শিশুটি ক্ষুধার কারণে কান্না করছিল। বাড়ির ভাড়টিয়া হান্নানের স্ত্রী কয়েকদিন আগে বাচ্চা প্রসব করেছেন। সেই হান্নানের স্ত্রীর বুকের দুধ শিশুটি প্রথম পান করেছে রোববার বিকেলে। হযরত আলীর মাদবরের বাড়ির ভাড়াটিয়া মীম নামের দুই শিশু জানায়, বিকেলে তারা বাড়ির মধ্যে একটি খালি রুমে বসে খেলা করছিল। এসময় ঘরের পিছনে তারা শিশু বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পায়। তারা দুজনে ঘরের পিছনে গিয়ে দেখতে পায় একটি বড় আইসক্রিমের খালি বাক্স। আর ঐ বাক্সটি দুই শিশুরা খুলে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি শিশুকে দেখতে পায়। এরপর তারা বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদের বিষয়টি জানায়। পরে সেখান থেকে বাড়ির ভাড়টিয়া হান্নান শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশুটিকে উদ্ধারের পর এলাকায় অনেক ব্যক্তি তাকে দত্তক নিতে ছুটে আসে। কিন্তু হান্নান শিশুটিকে তিনি রেখে দিবেন বলে এলাকাবাসীকে জানায়। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় সিদ্দিক মিয়ার ভাড়টিয়া বাড়ির একটি টয়লেটের ভেন্টিলেটরের মধ্যে কিছু রক্ত লেপ্টে আছে। তবে শিশুটি কার ঘরে জন্ম নিয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশকে কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি বাড়ির মালিক মালিক সিদ্দিকসহ অন্য ভাড়াটিয়ারা। ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই শাফিউল আলম বলেন, নবজাতকতে হান্নান নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি শিশুটিকে প্রথমে নিয়ে গিয়ে গোসলসহ নাড়ী কেটেছিলেন। তবে এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি পৃথকভাবে শিশুটিকে তাদের কাছে দিয়ে দিতে অনুরোধও করেন। শিশুটিকে নিতে পুলিশ সদস্য ময়েজ অফিসার ইনচার্জ স্যারের কাছে আবেদন করেন। স্যার শিশুটিকে জিডি মূলে ময়েজের স্ত্রীর কোলে তুলে দেন। শিশুটিকে আনুমানিক প্রায় ৩/৪ ফুট উপর থেকে ফেলা হয়েছিল একারণে তার কপালে একটি আঘাতের চিহ্নও ছিল। এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের পিপিএম বলেন,শিশুটিকে যারা জন্মের পরে ফেলে দিয়েছে তারা বনের পশুকেও হার মানিয়েছে। শিশুটির বৈধ কোন অভিভাবক পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন শিশুটিকে নিতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ময়েজকে অন্যদের চাইতে অভিভাবক হিসেবে যোগ্য মনে করা হয়েছে। তাই জিডি মূলে তাঁর কাছে শিশুটিকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাবা-মায়ের দায়িত্ব তারা পালন করবে বলে অঙ্গিকার করেছেন। তিনি জানান, শিশুটিকে একজন চিকিৎসক দেখানোর জন্য ময়েজকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।