অনলাইন ডেস্ক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে জেল খাটতে হয়েছিল ২২ যুবককে। ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ভৈরবের ২২ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে থানায় তাদেরকে অমানসিক নির্যাতন করে জেলে পাঠানো হয়। সেদিন আয়োজনকারীদের অপরাধ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ পড়ানো। তারপর দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর পর্যায়ক্রমে তাদের মুক্তি দেয়া হয়। সেই সাহসীদের কথা এখন আর কেউ স্মরণ করে না। আজ তারা অবহেলিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্য অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুঃখে-কষ্টে মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই বিশেষ দিনটি পালন করতে গিয়ে ৪২ বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন রসরাজ সাহা ও ফিরোজ মিয়া। তারা বলেন, ১৯৭৫ সালে অাজকের দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে সামরিক সরকারের ভয়ে তখন এদেশের গাছের পাতাও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে ভয় পেত। কিন্ত আমরা ২২ জন সেদিন সাহসিকতার সাথে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। আর একারণেই আমাদের গ্রেফতার করা হয়। অথচ এখন আওয়ামী লীগের নেতারাসহ কেউই আমাদের কথা মনে করে না। প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ দিবসে নেতারা আমাদের নিমন্ত্রণ পর্যন্ত দেয় না। জানা গেছে, আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন করতে ভৈরবে মিলাদের আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ ও ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান ফারুক। তৎকালীন হাজি আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে (বর্তমানে শৈবাল হোটেল) শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। সেদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ১২ জন মৌলভী ছাত্রাবাসে এসে কোরআন খতম শুরু করেন। বিকেল ৪টার মধ্য একে একে ২২জন নেতা কর্মী মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন। ভৈরবের অনেকেই মিলাদে আসার কথা ছিল কিন্ত সামরিক সরকার ও পুলিশের ভয়ে অনেকেই উপস্থিত হননি। সেদিন যারা উপিস্থিত হয়েছিলেন তারা হলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ (বর্তমানে ভৈরব পৌর মেয়র), আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুব (মৃত), মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন জজমিয়া (মৃত) , জিল্লুর রহমান জিল্লু (মৃত) , আসাদ মিয়া (মৃত) , আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, দীলিপ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই দিপেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান (মৃত), আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর (মৃত) , শাহজালাল হোসেন, আজমল ভূইয়া ও ফিরোজ মিয়া।
মিলাদ শুরুর আগেই এ খবর পৌঁছে যায় সামরিক সরকারে উচ্চ মহল ঢাকায়। তাৎক্ষণিক খবর পেয়েই ভৈরব থানার প্রায় ৪০/৫০ জন পুলিশ ছাত্রাবাসটি ঘিরে ফেলে। সেদিন পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেই মৌলভীদের কোরআন খতম বন্ধ করে দিয়ে গালিগালাজ শুরু করে। লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে সবাইকে। এসময় ফখরুল আলম আক্কাছ পুলিশের উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর মৌলভীসহ সবাইকে ভৈরব থানায় নেয়া হলো। থানায় নিয়ে সারারাত ২২ জনকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কিশোরগঞ্জ মহকুমা আদালতে চালান দেয়া হয়। মৌলভীদের থানায় নেয়ার পর মুচলেকা রেখে (মুচলেকায় বলা হলো ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর কোন মিলাদ আয়োজনে তারা যাবে না) ছেড়ে দেয়া হলো। এরপর আদালত জামিন না দিয়ে সেদিন ২২ জনকেই কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।