কলারোয়া

৬ ডিসেম্বর কলারোয়া মুক্ত দিবস

By daily satkhira

December 05, 2016

কলারোয়া প্রতিনিধি :  ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর, এই দিনে পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র থেকে মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে কলারোয়া উপজেলাকে মুক্ত করে কলারোয়ার দামাল ছেলেরা। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে নতুন ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’  প্রতিষ্ঠার ১০দিন আগে পাকহানাদার বাহিনি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের কবল থেকে  মুক্ত হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জনপদটি। কলারোয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ একাত্তরের অগ্নিঝরা এইদিনে পাকিস্থান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কলারোয়াকে মুক্ত করে। এই দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ে কলারোয়ার মাটিতে। পাকিস্থানী সেনা ও তাদের দোসরদের ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষত-বিক্ষত এই দিনে মুক্তিকামী মানুষের উল্লাসে মুখরিত হয়। জানাগেছে, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীনে ছিলো কলারোয়া উপজেলা। পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমনে কলারোয়ায় সর্ব প্রথম শহীদ হন উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। পরে  এপ্রিল মাসে পৌর সদরের বেতনা নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের পার্শ্ববর্তী পালপাড়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধাতাকারী পাক বাহিনীর এ দেশিও দোসরদের সহায়তায় পাকিস্থানের সৈন্যরা সেখানে হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে নিরস্ত্র ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। কলারোয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্থান সেনাদের কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৮সেপ্টেম্বর সীমান্তবর্তী বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে ২৯ জন পাকিস্থান সেনা নিহত এবং ১৭ জন স্বাধীনতাকামী বাংলা মায়ের বীর সন্তান শহীদ হন। এর আগে ১৭সেপ্টেম্বর কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে পাকিস্থান সেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়। ২৭ আগস্ট চন্দনপুর এলাকা পাকিস্তান বাহিনী মুক্ত হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা শার্শা উপজেলার বাগআচঁড়ায় দু:সাহসিক হামলা চালিয়ে ৭জন পাক হানাদারকে হত্যা করে। মায়ের ভুমিকে রক্ষা করার জন্য এভাবে একের পর এক সফল অপারেশনের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার পর পাক বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছিল কলারোয়া কে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ যুদ্ধ ও পাকিস্থানি সৈন্যদের নির্বিচারে গণহত্যা দেশের অন্যান্য স্থানের মত করারোয়াতেও গণহত্যা চালিয়েছিলো। গণহত্যার পর ওই সব মানুষের মরদেহ মাটিতে গর্ত করে এক চাপা দেয় পাকিস্থানি নরপশু ও তাদের এদেশীয় দোসররা। কলারোয়ার কয়েকজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা জানান, কলারোয়া উপজেলায় ৯টি গণকবরের অস্থিত্ব খুঁেজ পাওয়া গেছে। যার অধিকাংশই পড়ে আছে অযতœ আর অবেহলায়। এর মধ্যে কলারোয়া পৌরসদরে উত্তর মুরারীকাটি পাল পাড়ায় (৯ জন), কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠের দক্ষিণে(৫), সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের মঠমন্দির এলাকায় (৩) সোনাবাড়ীয়া মোড়ে (৩), ভাদিয়ালীতে (৪), যুগিখালী ইউনিয়নের বামনখালী ঘোষ পাড়ায় (৩), চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া বাজারে (২) কেঁড়াগাছি ইউপি’র বালিয়াডাঙ্গা বাজারে (৭) ও পার্শ্ববতী শার্শা উপজেলার জামতলা বাজারের সন্নিকটে (৫)। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানাগেছে, কলারোয়া উপজেলার ৩৪৩ জন কৃতি সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ  গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে প্রবাসী  সংগ্রাম পরিষদের সদস্য এম সিএ মমতাজ আহম্মেদ, শেখ আমানুল্লাহ, বিএম নজরুল ইসলাম, ৭১ এর রনাঙ্গনে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন, শ্যামাপদ শেঠ প্রমুখ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া পাকহানাদার মুক্ত হয়। এদিকে কলারোয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।