সাহিত্য

কবি শামসুর রাহমান প্রয়াণের একযুগ

By daily satkhira

August 17, 2018

সাহিত্য ও সংস্কৃতি: কবি শামসুর রাহমান বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তাকে বাংলা সাহিত্যের নাগরিক-কবিও বলা হয়ে থাকে। আজ কবি শামসুর রাহমানের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে জীবনের শেষ ঠিকানায় পাড়ি দেন। সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনায় কবি শামসুর রাহমান দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর তার লেখা দুটি কবিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। তার কবিতায় নগরকেন্দ্রিক সমকালের বিবর্ণ প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

এই চারশো বছরের পুরনো নগরী ঢাকার অধিবাসী শামসুর রাহমান বাংলাকাব্যে নাগরিকতার ধারক। অনেক কবির মতো শামসুর রাহমানের প্রকৃতি-নিসর্গ-নন্দনের বরপুত্র নয়, কণ্টকিত নগরসভ্যতার নীল অভিশাপই তার কবিতাকে বার বার সিক্ত করেছে। কবির জন্ম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, কর্মজীবন সবই ঢাকায়। আধুনিক কবিতা মাত্রই অনিবার্যভাবে নাগরিক; কিন্তু শামসুর রাহমানের কবিতা শুধু নাগরিক নয়, আরো কিছু! তার প্রকৃতি-চেতনাও নগরকেন্দ্রিক, বার বার যা ছায়াপাত করেছে তার রচিত কাব্যসমগ্রে। তার লেখা ‘বর্ণমালা’, ‘আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’সহ অনেক কবিতাতেই দেশের প্রতি প্রেম, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রতিপাদ্য হিসেবে উঠে এসেছে।

কবি শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার পুরান ঢাকার মাহুতটুলির, তার নানাবাড়িতে। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামে।বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে কবি ছিলেন চতুর্থ। ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে আর ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে পড়াশোনার জন ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। পাসকোর্সে বিএ পাশ করেন।

কবি শামসুর রাহমান পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতাকে। ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায়।পরের বছর রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে আবার মর্নিং নিউজে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মর্নিং নিউজের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালের শেষের দিকে দৈনিক পাকিস্তানে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন শামসুর রাহমান। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ওই পত্রিকাটি দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর সাহিত্য পত্রিকা অধুনার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে খ্যাতিমান। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। শামসুর রাহমান ১৯৫৫ সালের ৮ জুলাই জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে।

তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে নিজ মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা কাব্যগ্রন্থ ৬৬, উপন্যাস ৪, প্রবন্ধ গ্রন্থ ১, ছড়ার বই ১, অনুবাদ ৬। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। ভারতের যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে।

জীবনের সত্য-সুন্দরকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য। পাশাপাশি বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবদীপ্ত অধ্যায় ফিরে ফিরে এসেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। প্রকাশিত গ্রন্থ শতাধিক। দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন। কবি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পদকসহ (১৯৯১) দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তিনি লিখেছেন আমৃত্যু।