স্বাস্থ্য কণিকা: কচি কচি মুখ দেখলেই চারপাশে ফুফু-খালাদের হরদম বলতে শুনি ‘ওই বয়সটাই বেশ ছিল, কোনও চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, মাথা ব্যথা নেই’। আচ্ছা, সত্যিই এসব থেকে দূরেই আছে তো এরা? আপনি নিশ্চিত তো আপনার শিশুর মধ্যে কোনও উদ্বেগ, কোনও ভাবনা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু অন্য কথা বলছে। শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে আট মাস বয়স থেকে। এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যাংজাইটি নাকি ভালোও, তা চারিত্রিক বিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে তা ভয়ের কারণ তো বটেই। তিন বছর সময় পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে দূরে থাকলেই উদ্বেগ কাজ করে শিশুদের মধ্যে। স্বভাবতই তাদের চোখের আড়াল হলেই কেঁদে ওঠে বাচ্চারা। এছাড়া কোনও বিশেষ পোকামাকড় কিংবা জন্তু জানোয়ার থেকে ভয়, অন্ধকার থেকে ভয়, এসব বাচ্চাদের মধ্যে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই ভয় মনের গভীরে ঢুকে গেলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসা সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। এরকম পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।
সামাজিক উদ্বেগ এরকম পরিস্থিতিতে সামাজিক মেলামেশায় অস্বস্তিতে পড়ে শিশুরা। মন খুলে কথা বলতে পারে না। আর পাঁচজন তার ব্যাপারে কী ভাবছে, সে ব্যাপারে সব সময় সচেতন থাকে। স্কুলের এক্সকারশন, খেলাধুলোর সময় এদের বন্ধু তৈরি করতে সময় লেগে যায় অনেক। শুরু থেকেই সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত অভিভাবকদের।
যেসব শিশুরা অতিরিক্ত উদ্বেগের শিকার, তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মস্তিস্কের যে অংশ যুক্তিবোধ নিয়ন্ত্রণ করে) কাজ করা কমিয়ে অথবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় শিশুর চিন্তাভাবনা। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব দোলাচলের মধ্যে পড়ে এরা।
অ্যাংজাইটিতে ভোগা শিশুদের মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা যায়-
১.চট করে কেঁদে ফেলা
২. ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারানো
৩. ঘুমের ব্যাঘাত হয়, হামেশাই দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাওয়া
৪. রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা
৫. এক জায়গায় বেশ খানিকক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না
৬. খাদ্যাভ্যাসে ঘন ঘন বদল আসে, কখনও খিদে থাকে না, কখনও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খায়
৭.চাহিদা না মেটা পর্যন্ত ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে
৮. সারা শরীর মাঝে মধ্যেই কাঁপতে থাকা
৯. স্কুলের অথবা বাবা-মায়ের দেওয়া সামান্য চাপও এরা সামলাতে পারে না
১০.সারাক্ষণ বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হওয়ার ভয় এদের গ্রাস করে রাখে
১১. বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে এই সব বাচ্চাদের মধ্যে ভবিষ্যতে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা তাদের পরিবারকে ভেঙে দিতে পারে, এই ভয় তাদের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া।