জাতীয়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে চালু হচ্ছে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

By daily satkhira

August 19, 2018

দেশের খবর: ঈদুল আজহায় দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এজন্য ঈদের আগের দিন (২১ আগস্ট) উৎপাদনে যাচ্ছে বন্ধ থাকা বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সে লক্ষ্যে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে অল্প অল্প করে পাওয়া কয়লা মজুতও করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের দাবি, এতে করে ঈদের সময় অন্তত পাঁচ-ছয় দিন কেন্দ্রটি চালু রেখে উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সংরক্ষণ) প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন—‘ঈদের আগের দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হবে। কয়লা মজুত সাপেক্ষে পাঁচ থেকে ছয় দিন চালু রাখার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।’ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির মুখে স্থাপিত দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে গত ২২ জুলাই রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। উত্তরাঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের সক্ষমতা নেই জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডের। সে কারণে লোড ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতো এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। পুরো গরমের মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় অসহায় হয়ে পড়ে পিডিবি। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)-এর রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতি দিন ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। এই চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট। এতে উত্তরের এই আট জেলায় লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি লো-ভোল্টেজে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। তবে কোরবানি ঈদের সময় এই আট জেলার মানুষকে লোডশেডিংমুক্ত রাখতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। সেই লক্ষ্যেই দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঈদের সময় অন্তত পাঁচ-ছয় দিন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র সুত্রে জানা যায়, এই বিদ্যুকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে একটি ইউনিট নিয়মিত সার্ভিসিংয়ে রয়েছে, যার উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট। এই ইউনিটটি অক্টোবর-সেপ্টেম্বর নাগাদ চালুর উপযোগী হবে। ১২৫ ও ২৭৫ মেগাওয়াটের বাকি দু’টি ইউনিট উৎপাদনের যাওয়ার উপযোগী রয়েছে। আসন্ন ঈদের সময়ে এ ইউনিট দু’টি চালু রাখা হবে। ১২৫ মেগাওয়াটের ইউনিটটি চালু রাখতে হলে দৈনিক ১২০০ টন ও ২৭৫ মেগাওয়াটের অন্যদুটি ইউনিটে ২৮০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সংরক্ষণ) প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বড়পুকুরিয়া থেকে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পাওয়া কয়লা মজুত করে রাখা হচ্ছে। এই কয়লা দিয়ে ঈদের আগের দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হবে এবং কয়লা মজুত সাপেক্ষে পাঁচ থেকে ছয় দিন চালু রাখার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ টন পর্যন্ত কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার মজুতের পরিমাণ ৫০০০ হাজার টন ছাড়িয়েছে বলে জানান তিনি। গ্যাস টারবাইন দ্রুত সময়ে চালু ও বন্ধ করা গেলেও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম সরকার। তিনি জানান, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। আবার বন্ধ করতে হলেও প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা। জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনিতে গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে ২০১০ নম্বর ফেসে কয়লার মজুত শেষ হওয়ায় গত ১৯ জুন থেকে খনিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। নতুনভাবে ১৩১৪ নম্বর ফেসে কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন পুরনো ফেসের উৎপাদিত সরঞ্জাম নতুন ফেসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন ফেসে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করতে আরও প্রায় একমাস সময় প্রয়োজন হবে বলে খনি সূত্রে জানা গেছে। তবে নতুন ফেস থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য খনির অভ্যন্তরে টানেল তৈরি করা হচ্ছে। সেই টানেল তৈরি করতে গিয়ে কিছু কয়লা পাওয়া যাচ্ছে, যা জমিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির কর্মকর্তারা। প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন,‘গত ২০ জুন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ পিডিবিকে নিশ্চিত করে যে, খনির কোল ইয়ার্ডে এক লাখ ৮০ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। মজুতে থাকা এই কয়লা দিয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখা যাবে বলেও নিশ্চিত করে খনি কর্তৃপক্ষ। তবে জুলাই মাসের শুরু থেকেই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হঠাৎ কয়লার সরবরাহ কমিয়ে দেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পিডিবিকে জানিয়ে দেওয়া হয়— খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।এরপর গত ২২ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এদিকে, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা দুর্নীতির ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা ঘাটতি বা চুরি হয়েছে। খনিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা গত ১৯ জুলাই খনির এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহম্মেদকে প্রত্যাহার ও কোম্পানি সচিব মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে অন্যত্র বদলি করে। একইসঙ্গে খনির মহাব্যবস্থাপক মাইনিং এটিএম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদুর ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এই ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৪ জুলাই খনির ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।