দেশের খবর: ঢাকায় দায়িত্বরত বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। শনিবার বিকালে জাতীয় শোক দিবস পালনের অংশ হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়িতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উদ্দেশে ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির এ বিষয়টি তুলে ধরে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করা হয় ও হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার বিষয়টি কূটনীতিকদের অবহিত করেন। আন্তর্জাতিক উপকমিটির নেতারা বলেন, জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর এর বিচার রোধে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ যে অধ্যাদেশ জারি করেন, জিয়াউর রহমান তা সংবিধানে সংযোজন করেন ১৯৮১ সালে। সেই সঙ্গে খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করে পাঠিয়ে পুরস্কৃত করেন। কূটনৈতিকদের তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি আরদুর রশিদ এবং ফারুক রহমান ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যান্থরি মাসকারেহানসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন জাতির জনককে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি তারা জিয়াউর রহমানকে আগেই জানিয়েছেন। আর সে সময়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও পরে সেনাপ্রধান অবস্থায় রাষ্ট্রপতি হওয়া জিয়াউর রহমান তাদেরকে এগিয়ে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে ক্ষমতাসীন দলের আন্তর্জাতিক উপকমিটির নেতারা কূটনৈতিকদের বলেন, আওয়ামী প্রধান এ কারণে বলেছেন যে, জিয়াউর রহমানের বিচার করতে না পারায় তার দুঃখ রয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে চলমান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পাশাপাশি নেতাদের অপরাধ ও অপকর্ম এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামের কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোকপাত করা হয়। এছাড়াও কূটনৈতিকদের প্রতি রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে এবং নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে নিরাপদে ও সসম্মানে মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে পারে- তা নিশ্চিত করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, ভারত, চীনসহ ৪২ টি দেশের কূটনীতিক ও তাদের প্রতিনিধি। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কূটনীতিকদের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। পরে আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দলের নবগঠিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সঙ্গে কূটনীতিকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও নির্বাচনসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্যই এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল।