অনলাইন ডেস্ক: নওগাঁর আলিম হোসেন ৪০টি গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের হাটে। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদারদের নিয়োজিত লোকদের কবলে পড়েন তিনি। আলিমের গরুবাহী ট্রাক থামাতে বাধ্য করেন ইজারাদারদের লোকজন। তাদের বক্তব্য, গরু গাবতলী হাটে নামাতে হবে। কিন্তু আলিম তো যাবেন চট্টগ্রাম। বারবার তিনি বলছেনও সে কথা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এরই মধ্যে দুয়েকজন উঠেও যান গরুবাহী ট্রাকের ওপর। অবশেষে কোনও রকমে ইজারাদারের লোকজনের হাত-পা ধরে এ যাত্রায় পার পান আলিম। তবে রাজধানীর ওপর দিয়ে যাওয়ার পথে আরও অনেক হাট পেরুতে হবে তাকে। তখন কী হবে? এভাবে কতবার অন্যের হাত-পা ধরবো, এমন প্রশ্ন আলিমের। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদের আগে এমন অভিযোগ অহরহ শুনতে পাওয়া যায় রাজধানীতে। এমন পরিস্থিতি থেকে পশুবাহী ট্র্রাক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের রক্ষায় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ২২ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোরবানির পশুবাহী গাড়ি কোন হাটের উদ্দেশে রওনা হয়েছে সেই স্থান ও বাজারের নাম লেখা ব্যানার লাগাতে হবে গাড়ির সামনে। এটি দেখে পশুবাহী ট্রাককে পথে কেউ আটকাতে পারবে না। জোর করে কেউ কোনও হাটে পশু নামাতে বাধ্য করতে পারবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি প্রতিহত করবে এবং গরু ব্যবসায়ীদের তাদের গন্তব্যে যেতে সার্বিক সহায়তা করবে। ওই সভায় বলা হয়, যে জেলা থেকে পশুবাহী ট্রাকটি বের হবে সেই জেলার পুলিশকেই বিষয়টি দেখভাল করতে হবে এবং ব্যানার লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত অমান্য করেই রাজধানীর ওপর দিয়ে যাচ্ছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক। রাজধানীতেও আসছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশুবাহী ট্রাক। আজ শনিবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত কোনও ট্রাকের সামনেই কোনও ধরনের ব্যানার চোখে পড়েনি। নওগাঁর গরু ব্যবসায়ী আলিম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তো আমি জানি না। আমাকে কেউ বলেও নাই যে ট্রাকের সামনে ব্যানার লাগিয়ে পশুবাহী ট্রাক রাস্তায় বের করতে হবে।’ জানতে চাইলে গাবতলী পশুর হাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও জানি না। তবে সিদ্ধান্তটি তো খুবই ভালো। আলিম হোসেনের পশুবাহী ট্রাকের সামনে যদি ব্যানারে লেখা থাকতো যে এটি চট্টগ্রাম যাবে, তাহলে তো কেউ তার পথরোধ করতো না। সিদ্ধান্তটি আসলে সেভাবে প্রচার করা হয়নি।’ গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজধানীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে গরু আসতে শুরু করেছে। রাজধানীতে এখনও সবগুলো পশুর হাটে পুরোদমে কেনা-বেচা শুরু হয়নি। তবে হাটগুলোয় প্রতিদিনই পশুর সমাগম বাড়ছে। সামনের কয়েকদিন অনেক পশুবাহী ট্রাক রাজধানীতে আসবে, রাজধানীর ওপর দিয়ে অন্য জেলাগুলোতেও যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে জোর করে ট্রাক থামিয়ে ইজারাদারদের পছন্দসই হাটে গরু নামানোর ঘটনা অহরহ ঘটবে বলে তারা আশঙ্কা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা যদি সরকারের সিদ্ধান্ত না মেনে সমস্যায় পড়েন সেক্ষেত্রে তো আর পুলিশ নির্বিকার থাকতে পারে না। যতদূর সম্ভব পুলিশ ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে এবং করবে।’ মন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত আমরা বড় কোনও অভিযোগ পাইনি। জেলা পর্যায় থেকে যদি ট্রাকের সামনে ব্যানারে গন্তব্যের নামটি লেখা থাকে তাহলে পুলিশের পক্ষে কাজটি করা সহজ হবে। কোনও ইজারাদারের লোকজন আর কাউকে গাড়ি থেকে গরু নামাতে বাধ্যও করবে না। জানা গেছে, এবার উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রংপুর এবং যশোর থেকে বেশি গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে ঢাকায়। বেশি লাভের আশায় কোরবানির পশু নিয়ে ওই সব এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন রাজধানীতে। আবার কেউ কেউ ছুটছেন রাজধানীর বাইরে অন্য জেলায়। নিজেদের হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু ওঠাতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন ঢাকার ইজারাদাররাও। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে খুঁটি কিনছেন ব্যবসায়ীরা, এমন অভিযোগও রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর হাটগুলোর প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে। হাটে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। হাটগুলোকে কেন্দ্র করে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সক্রিয় রয়েছে। পশু কেনা-বেচার সময় টাকা লেনদেন ও জাল টাকা নিয়ে কোনও সমস্যায় যাতে পড়তে না হয় সে জন্য কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহাসড়কগুলোতে যাতে ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে সে জন্যও সক্রিয় রয়েছে র্যাব-পুলিশ। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছরই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশের হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। রাজধানীসহ সারাদেশে পশু পরিবহন ও নির্দিষ্ট হাটে পৌঁছাতে চাঁদাবাজি বা অন্য কোনও সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য র্যাব কাজ করছে। এখন কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে যে সংখ্যক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে তা দিয়ে এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। সারাবছর দেশে প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ পশু জবাই করা হয় কোরবানির সময়। সে হিসাবে এ বছর কোরবানির যোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ পশু রয়েছে।