দেশের খবর: বস্তিবাসীদের বহুতল ভবনে নিতে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীতে আর কোনো বস্তি থাকবে না।
রোববার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “রাজধানীতে কোনো বস্তি থাকবে না। এর স্থলে ২০ তলা করে ভবন গড়ে তোলা হবে। এখন যেমন বস্তিবাসীরা ভাড়া দিয়ে থাকেন তেমনি তখন তারা ওসব ভবনেও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে বসবাস করবেন।”
বস্তিবাসীদের ঠাঁই দিতে মিরপুরে ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রকল্প গত বছরই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের আওতায় মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১১ নম্বর সেকশনে প্রথম পর্যায়ে দুই একর জমিতে পাঁচটি ১৪তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে ১১৭টি ফ্ল্যাট। ওই পাঁচটি ভবনে মোট ৫৩৩টি পরিবার থাকতে পারবে।
এর আগে ভাষানটেকেও একই ধরনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে গরিবদের বদলে বিত্তবানরাই ওই সব ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শ্রমিকদের বসবাসে ভালো বাসস্থানের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষকে রাজধানীতে আসতে হয়। আবার আমাদের দৈনন্দিন কাজেও এই শ্রমিক শ্রেণির প্রয়োজন পড়ে। তারা যেন একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেজন্যই তাদের বসবাসের জন্য একটু ভালো পরিবেশের দরকার। “দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে কাজেই তারও যেন সেই ছোঁয়াটা পায় সেটা আমাদের দেখতে হবে।”
বস্তিবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“সবাই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকবে, আর আমার বস্তিবাসী থাকবে না, এটা কেমন কথা। বিদ্যুৎ, পানির প্রিপেইড মিটার থাকবে, তারা যতটুকু ব্যবহার করবে তার বিল দেবে। কারণ শহর যত উন্নত হয় তার কাজের জন্য এ ধরনের কর্মীও লাগে। কজেই তাদের জীবন-মানটা যেন উন্নত হয় সেদিকেও ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
ঢাকা ছাড়াও পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যত যে উন্নয়নটা হবে, তার ছোঁয়া উচ্চবিত্তের পাশাপাশি এই খেটে খাওয়া নিম্নবিত্তরাও যাতে পায়, তা নিশ্চিত করা হবে। কারণ, এই নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের জন্যই আমার রাজনীতি।”
আগামীতে ক্ষমতায় এলে ঢাকার সব বক্স কালভার্ট ভেঙে খালগুলো উদ্ধার করে সেগুলো উন্মুক্ত করে তার উপরে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“ওই বক্স কালভার্টগুলোকে খালে উন্মুক্ত করে দেব। আর খালের ওপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করে দেব। রাস্তা প্রয়োজন আছে আমার, কিন্তু রাস্তাগুলো আমি যদি খালের ওপর করে ফেলি তাহলে সমস্যা থাকল না। রাস্তাও থাকল, খালও থাকল। আবার পয়ঃনিষ্কাশন, পানির সরবরাহ ব্যবস্থাও ভালো হল।
“আমাদের তো সময় শেষ, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। যদি আগামীতে আসতে পারি আমার একটা টার্গেট বা লক্ষ্য থাকবে, প্রত্যেকটা বক্স কালভার্ট ভেঙে ফেলে দেব আমি। আশা করি পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা হবে আমাদের।”
ঢাকার খালগুলো ভরাট হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে, তাও বলেন শেখ হাসিনা।
“ঢাকা শহরের চারদিকে ৫টি নদী, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু নদী, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা। নদী দিয়ে ঘেরা ঢাকা শহর। ঢাকা শহরের ভেতর খালগুলো ছিল শিরা-উপশিরার মতো। সেখানে আমরা দেখলাম সেগুন বাগিচা খাল সেখানে বক্স কালভার্ট করা হল, আজকে পান্থপথ সেটা কিন্তু খাল। সেখানেও বক্স কালভার্ট, শান্তিনগর খাল সেটাও বক্স কালভার্ট। আর তার ফলে জলাবদ্ধতা, নানা সমস্যা।”