দেশের খবর: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মিরপুর কার্যালয়ের সামেন যানবাহনের ভিড় লেগেই আছে। ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ ও নবায়ন করতে গভীর রাত থেকে সিরিয়াল ধরতে শুরু করেছে দূরপাল্লার বাস, মিনিবাস, ট্রাক পিকআপ-কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন। আর এর সুযোগ নিচ্ছে একটি চক্র। তারা সিরিয়ালে গাড়ি রাখার জন্য প্রতিটি পরিবহন থেকে তারা ১০০ করে টাকা চাঁদা নিচ্ছে। না দিলেই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাড়ি। বিআরটিএ’র ভেতরে ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টাররের (ভিআইসি) সামনে দেখা যায়, পরিবহনের ভিড়। এই সেন্টারে ডিজিটাল মেশিনের সহায়তায় বিরতিহীনভাবে চলছে মোটরযানের ফিটনেস টেস্ট। দুইজন মোটরযান পরিদর্শক ও দুইজন মেকানিক্যাল এসিস্টেন্ড এই ফিটনেস পরীক্ষার কাজ করছেন। অপরদিকে, লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেই সবাই গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার ফি জমা ও রেজিস্ট্রেশন আবেদনের কাজ করছেন। ভেতরে দালালদের উৎপাদ না থাকলেও বাইরে তৎপর তারা। ফিটনেসের সিরিয়ালে থাকা পরিহন চালকদের অভিযোগ, সুযোগ পেলেই দালালরা তামাশা শুরু করে। ফিটনেস করতে এসেছি, সিরিয়ালে দাঁড়াবো তাও ১০০ টাকা দিতে হয়েছে তাদের। নয়তো গাড়ি দাঁড়াতে দেয় না, ঘুড়িয়ে পাঠিয়ে দেয়। আবার ২০০-৩০০ টাকা দিলে গাড়ির সিরিয়াল আগে নিয়ে যায়। কেউ কিছু বলতে পারে না, কারণ এখানে চালকরা বিভিন্ন এলাকার আর এই চাঁদাবাজরা মিরপুরের স্থানীয় লোক। ফিটনেস ছাড়া এখন গাড়ি সড়কে বের করা যায় না। একদিকে বিআরটিএ প্রচণ্ড চাপ, আগের রাতে সিরিয়াল ধরেছেন তারা। সিটি সার্ভিস ভিআইপি পরিবহনের চালক সেলিম বলেন, ‘ গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে সিরিয়োলে দাঁড়িয়েছি তাতেও ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। এরা সব দালাল পার্টির লোক। ভেতরে সুবিধা করতে পারে না তাই বাইরে উৎপাত শুরু করেছে।’ চালকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) বিআরটিএ’র বাইরে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় আনসার সদস্যরা। সেখান থেকে সাতজনকে আটক করে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বিআরটিএ’র আনসার ক্যাস্পের (এপিসি) সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ রেদোয়ানসহ আরও বেশ কয়েকজন দালাল চক্রের মুলহোত আরিফ সহ সাতজনকে হাতে-নাতে আটক করেন। এদেরমধ্যে- আরিফকে ৩ মাস; স্বপন দেবনাথ ও মিজান সরকারকে ১মাস; নয়ন, রাজু সোলায়মান ও সাহেব আলীকে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেয় বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলামের কোর্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিটনেস নবায়নের জন্য আসা পরিবহনগুলোকে সিরিয়ালে দাঁড়ানোর জন্য ১০০ করে টাকা তুলতো দালাল চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য। আর এই কাজে নেতৃদ্বে ছিল দালাল চক্রের হোতা আফির। সে মিরপুর-১০ নম্বরে বসবাস করেন। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন স্বপন দেবনাথ নামের আরও একজন। এই কাজে আরও নিয়জিত ছিলেন- মিজান সরকার, নয়ন, মো. রাজু, সোলায়মান ও সাহেব আলী। তারা সিরিয়াল দেওয়ার নাম করে চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল।’
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র আনসার ক্যাম্প ইনচার্জ কমান্ডার মো. মনির হোসেন বলেন, ‘ভেতরে দালালের কোনও উৎপাত নেই, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরাও সার্বক্ষণিক পাহাড়া দিচ্ছি, ভেতরে কোনো দালাল চক্রের সদস্যদের পেলে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হচ্ছে।’ বিআরটিএ’র বাইরের দালালদের উৎপাত রয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম, সে কারণে বাইরে দালালদের সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও আমরা বাইরে টহল দিয়ে দালালদের আটক করছি।’ দূরপাল্লার বাস ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিহবনের চালক মো. আলম বলেন, ‘গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া সব কাগজপত্র সঠিক আছে। এখন ফিটনেস না থাকলে গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হওয়া যাবে না। তাই ঈদের আগেই নবায়ন করতে এসেছি।’ বিআরটিএ’র ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টাররের (ভিআইসি) দায়িত্বরত মোটরযান পরিদর্শক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে যানবাহেনের ফিটনেস টেস্ট করছি। গাড়ির সবকিছু ঠিক থাকলে মেশিনটি অটোমেটিক ‘ওকে’ করে দেয়। এসময় দূরপাল্লার পরিবহনের সংখ্যা বেশি, এছাড়াও মিনিবাস ট্রাক ও পিকআপের সংখ্যা রয়েছে। তবে প্রাইভেটকারের সংখ্যা সেই তুলনায় কম।’ বিআরটিএ’র ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টাররের (ভিআইসি) দায়িত্বরত মেকানিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট রাশেদ মিলন বলেন, ‘বেশ কিছু মিনি বাসে সিট সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত সিট কেটে ফেলার পরে আবার এখানে নিয়ে আসলে ফিটনেস টেস্ট করে সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে।’ মোটরসাইকেলরে রেজিস্ট্রেশন করতে আসা আবেদ হোসেন বলেন,‘বিআরটিএ’র অনলাইন সাইটে গিয়ে দেখছি, রেজিস্ট্রেশন করতে কী কী লাগে, কত টাকা জমা দিতে হয় সবকিছু জেনে নিয়ে এসেছি। নিজের জানা থাকলে কোনও দালাল ধরতে হয় না।’