যশোর প্রতিনিধি: ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে কয়েক গুণ। ভ্রমণপিপাসু ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু এতে যাত্রীদের সুবিধা দেখার যেন কেউ নেই! বেড়েছে তাদের ভোগান্তি।
বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্টে কাস্টম এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্বেও বন্ধ হয়নি ইমিগ্রেশান পুলিশের পাসপোর্ট দালালী। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এখানে কর্মরত সিপাহীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। বেপরোয়া সিপাহীরা ভারত যাতয়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানীসহ তাদের কাছ থেকে ইমিগ্রেশনের কাজ করে দিবে এমন আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনেই এসব পুলিশের বিচরণ। কোন পাসপোর্ট যাত্রীকে দেখলেই তারা ছুটে যায় তার কাছে। বলে, ২শ টাকা দিন পাসপোর্টের সকল কাজ করে দিচ্ছি। ভারতগামী সাধারণ যাত্রীসহ ডাক্তার, উকিল, ব্যারিস্টার, সাংবাদিকসহ রোগী, শিশু কেউ রেহায় পাচ্ছে না এই ইমিগ্রেশন পুলিশের হাত থেকে।
ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঈদ প্যাকেজে অসংখ্য বাংলাদেশীকে ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ফলে ঈদের ছুটির সোম, মঙ্গল, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২০, ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ আগস্ট) ৫ দিনে প্রায় ২৭ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্ট দালালীর মত ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে।
ঈদের ৫ম দিন শুক্রবার সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে আছে কয়েক হাজার নারী, শিশু ও পুরুষ যাত্রী। ধীর গতির কারনে দুইদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। দুই দেশের কর্তৃৃপক্ষ ইমিগ্রেশনে ও বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল বৃদ্ধি না করায় দীর্ঘ সময় লাগছে পারাপারে।
কক্সবাজার থেকে আসা আয়ুব হোসেন ও তার স্ত্রী স্নেহময়ী বলেন, ‘আমাদের পাসপোর্টে আমরা নিজেরা কাজ করবো। কিন্তু টার্মিনালের বারান্দায় পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট জোর করে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা দিইনি।
এ দিকে বেনাপোল বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের বারান্দায় এসে সরেজমিনে দেখা যায় ইমিগ্রেশন পুলিশের সিপাহি সজিব, শহিদুল, সেকেন্দার, ইমরুল এবং বাবুল পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট আর টাকা নিচ্ছে ইমিগ্রেশানের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে।
এ সময় বেনাপোল স্থল বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক ও সিবিএ নেতা মনির হোসেন মজুমদার জানান, বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে ইমিগ্রেশিন পুলিশের সিপাহিরা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নানাভাবে নাজেহাল করে থাকে। আমরা ওসি সাহেবের কাছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয় না।
একই কথা জানালেন টার্মিনালে কর্মরত একজন বিজিবি সদস্যও। তাছাড়া ভারতগামী কয়েকজন সিনিয়র পাসপোর্টধারী যাত্রী জানান, এখানে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পুলিশি হয়রানী থেকে রেহায় পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করা খুব দরকার।
বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মোঃ মাসুম কাজী জানান, আমাদের ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা নেই। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চাপ বাড়লেও তাদের দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে ১৬টি ডেস্কে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে অফিসাররা। এবার ঈদে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভারত ভ্রমণের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এ কারণে ইমিগ্রেশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে ইমিগ্রেশন পুলিশের পাসপোর্ট দালালীর ব্যপারে যাত্রীদের অভিযোগের কথা বললে তিনি জানান, ইমিগ্রেশানের এরিয়ার বাইরে গিয়ে যদি কোন পুলিশ সদস্য পাসপোর্ট দালালী বা যাত্রীদের হয়রানী করে তাহলে তার দায়ভার তার নয়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন তার জন্য ঈদের ছুটির মধ্যেও জনবল বাড়িয়ে কাজ চলছে চেকপোস্ট শুল্ক তল্লাশি কেন্দ্রে। আমাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কোন অভিযোগ থাকলে প্রমাণসাপেক্ষে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।